ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে বসবাস সিন্দুবালার
বিধবা সিন্দুবালা সরকার। বয়স ৬২ বছর ছুঁইছুঁই। ছয় বছর আগে মারা যান স্বামী। নেই কোনও সন্তানাদি। অন্যের বাড়িতে শ্রম দিয়ে কোনোমতে চলে জীবনযাপন। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে বসবাস। কুয়াশা-বৃষ্টি-বাতাসের আতঙ্কে ভাঙা ঘরে নির্ঘুম রাত কাটে তার।
এই বৃদ্ধার বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের তরফবাজিত (দক্ষিণপাড়া) গ্রামের। তিনি ওই গ্রামের মৃত মনিন্দ্রনাথ সরকারের স্ত্রী।
সরেজমিনে জানা যায়, মাত্র কয়েক শতক জমি রেখে সিন্দুবালার স্বামী মারা গেছেন। এ ছাড়াও নেই কোনো সহায়-সম্বল। ইতিমধ্যে বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়লেও জীবিকার তাগিদে ছুটতে হচ্ছে কৃষকের মাঠে বা অন্যের দুয়ারে। বেঁচে থাকার তাগিদে কখনও কৃষকের ফসলি জমিতে শ্রম বিক্রি, আবার কখনও অন্যের বাড়িতে করতে হয় ঝিয়ের কাজ। এভাবে জীবিকা নির্বাহ করে চলছেন সিন্দুবালা। এরই মধ্যে ওইসব কাজের জন্যও কদর কমেছে তার। কারণ বার্ধক্য, বয়স ও নানা অসুস্থতার কারণে এলাকার মানুষ তাকে কাজের জন্য এখন তেমন ডাকে না। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে সিন্দুবালাকে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ওই বিধবার থাকার একমাত্র ঘরটিও জরাজীর্ণ অবস্থা। টিনের চালায় লাগানো হয়েছে পলিথিন ও ট্রিপল। দিনের বেলায় বেড়ার ফুটো দিয়ে দেখা যায় সূর্যের আলো। রাতে চালার উপরে দিয়ে নজর কাড়ে আসমানের তারা। জোড়াতালি এই ভাঙা ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে চলছেন সিন্দুবালা। এক মুঠো অন্নের জন্য সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর রাতে ঠিকভাবে ঘুমাবেন কিন্তু তার চোখে আসে না ঘুম। শীতের কুশায় আর বৃষ্টি-বাতাসের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে তার। বর্ষাকালে আকাশের মেঘ দেখলে দৌঁড় দিতে হয় অন্যের বাড়িতে। আর শীতকালে কনকনে বাতাস আর কুয়াশায় ভিজে যায় বিছানাপত্র। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ঝুঁকিপুর্ণ এই ঘরে বসবাসের কারণে বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে সিন্দুবালার শরীরে। এসব রোগ নিরাময়ে নিয়মিত ওষুধ খাবেন এমন সামর্থ্যও নেই তার। একেবারই জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে কোনোমতে বেঁচে আছেন ওই ভাঙা ঘরটিতে।
কান্নাজড়িত কন্ঠে বিধবা সিন্দুবালা বলেন, সরকারি বরাদ্দে ঘর পাবার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনও কাজ হয়নি। কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাকে যদি একটু মাথা গোজার ঠাঁই করে দিতেন তাহলে হয়তো শেষ বয়সে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম।
স্থানীয় সুনিল চন্দ্র সিপন নামের এক ব্যক্তি জানান, স্বামী হারিয়ে সিন্দুবালা এখন খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। একটি মাত্র ঘর তাও আবার ভাঙাচুরা। একদম বসবাস অনুপযোগী। সরকারি কিংবা কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাকে পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হতো।
এ বিষয়ে জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ(ইউপি)চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান মন্ডল বলেন, অন্যান্য ব্যাপারে সিন্দুবালাকে সুবিধা দেওয়া হয়। ঘরের বিষয়টি দেখা হবে।
এ ব্যাপারে সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রোকসানা বেগম বলেন, জামালপুর ইউনিয়নে যখন খাস জমিতে ঘর নির্মাণ হবে তখন উনি যদি সেখানে যেতে চান তাহলে ঘর দেওয়া যাবে।