আধুনিক শিশু হাসপাতাল নির্মিত হলেও নেই চিকিৎসাসেবা
রংপুরে চিকিৎসক সহ জনবল নিয়োগ ও যন্ত্রপাতি না থাকায় ১০০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক শিশু হাসপাতাল নির্মিত হলেও চিকিৎসাসেবা চালু হচ্ছে না। দ্রুত জনবল নিয়োগ দিয়ে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চালুর দাবি জানিয়েছেন রংপুরের বিশিষ্ট নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে। ১৯১৭ সালে ৩১ কোটি ৪৮ লাখ ৯২ হাজার ৮০৯ টাকা ব্যয়ে আধুনিক শিশু হাসপাতালটি নির্মাণ করেন ঢাকার দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এক একর ৭৮ শতাংশ জমির মধ্যে শিশু হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। মূল ভবনের প্রথম তলায় থাকবে ইমার্জেন্সি, আউটডোর, চিকিৎসকদের চেম্বার ও ল্যাব। এই আধুনিক শিশু হাসপাতালটি নগরীর মধ্যে স্থল সিটি কর্পোরেশনের সামনে অবস্থিত।
রংপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রংপুরের তৎকালীন সদর হাসপাতালের ১ একর ৭৮ শতাংশ জমির মধ্যে শিশু হাসপাতাল নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর। ৩১ কোটি ৪৮ লাখ ৯২ হাজার ৮০৯ টাকা মূল্যের সেই কাজ ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মল্লিক এন্টার প্রাইজ ও মেসার্স অনিক ট্রেডিং করর্পোরেশন হাসপাতালের ভবন নির্মাণ করে। তিন তলা মূল হাসপাতাল ভবনের প্রতি তলার আয়তন ২০ হাজার ৮৮২ দশমিক ৯৭ বর্গফুট।
নির্মাণ করা হয়েছে চারতলা ভিত্তির তিন তলা সুপারিনটেনডেন্ট কোয়ার্টার। সিঁড়ি ছাড়া প্রতি তলার আয়তন দেড় হাজার বর্গফুট। ছয় তলা ডক্টরস কোয়ার্টারের নিচতলায় গাড়ি পার্কিং, দ্বিতীয় তলা থেকে ডাবল ইউনিট। ছয় তলা বিশিষ্ট স্টাফ অ্যান্ড নার্স কোয়ার্টার। দুই তলা বিশিষ্ট গ্যারেজ কাম ড্রাইভারস কোয়ার্টার।নিচে দুটি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। বিদ্যুৎ সাবস্টেশন স্থাপনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি ভবন।
রংপুরের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজকর্মী ডাঃমফিজুল ইসলাম বলেন, শিশু হাসপাতাল নির্মাণের জন্য বছরের পর বছর ধরে সচেতন নাগরিকদের নিয়ে আন্দোলন করছি। এজন্য মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়েছে। রংপুর বিভাগীয় শহর হওয়ায় এখানে আশপাশের জেলা থেকেও শিশু রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসে। এদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে সরকার এখানে একটি আধুনিক ১০০ শয্যার শিশু হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন ঠিকই, কিন্তু সেখান এযাবৎ লোকবল নিয়োগ হয়নি আসেনি চিকিৎসার যন্ত্রপাতি। যত দ্রুত সম্ভব শিশু হাসপাতালটি চালু করার দাবি জানাচ্ছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শিশু হাসপাতালের মূল ভবনের প্রথম তলায় থাকবে ইমার্জেন্সি, আউটডোর, চিকিৎসকদের চেম্বার ও ল্যাব। দ্বিতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার এবং তৃতীয় তলায় ওয়ার্ড ও কেবিন থাকবে। হাসপাতাল ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা সিভিল সার্জনকে ২০২০ সালের ৮ মার্চ হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ায় ভবনটি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তর করা হয়। এখন সেখানে করোনা রোগীদের চাপ নেই। এ কারণে আধুনিক ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতালের সেবা শুরুর দাবি জানিয়েছেন রংপুরবাসী।
রংপুরের সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম বলেন, শিশু হাসপাতালটি এভাবে পড়ে থাকলে পরিত্যক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত জনবল নিয়োগ করে শিশু হাসপাতালটিতে সেবা কার্যক্রম চালু এখন সময়ের দাবি। এখানে শিশুদের চিকিৎসা সেবা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শরীফুল আলম বলেন, বিশিষ্ট শিশুবিশেষজ্ঞ নিয়োগ, নার্সসহ জনবল নিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার। আধুনিক কী কী যন্ত্রপাতি প্রয়োজন তা দেখতে হবে। এ জন্য খুব শিগগির সভা করে চাহিদার কথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে। এবিষয়ে কবে নাগাদ সভায় পাশ করা হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি।
এএজেড