সীমান্তে কাছ থেকে কথা ও দেখতে না পারায় দর্শনার্থীদের দুঃখ
শারদীয় দুর্গাপুজা উপলক্ষ্যে দুদেশের দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত এলাকা মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে যেমন ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা তেমনি ভারত অংশে দর্শনার্থীদের ভিড় রয়েছে। কেউবা এসেছেন পুজা দেখতে ও কেউবা এসেছেন আত্মিয়স্বজনের সাথে দেখা করতে। কিন্তু সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফের কঠোর মনোভাবের কারণে দুর থেকে হাত নেড়ে মনের ভাব প্রকাশ করে মনে কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরছেন দর্শনার্থীরা।
দূর্গাপুজা শুরুর পর থেকেই প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও পিকআপে নিয়ে দর্শনার্থীরা আসছেন হিলি সীমান্তে। ভারতের অভ্যন্তরেও দর্শনার্থীরা আসছেন বাংলাদেশের পুজা দেখতে যা দশমির দিন পর্যন্ত চলে। কিন্তু পারাপার হতে না পারায় শুন্যরেখার অদূরে দুই পার্শ্বে দাঁড়িয়ে দুদেশের দর্শনার্থীরা একে অপরকে দেখছে ও ছবি তুলে মনের ভাব প্রকাশ করছে। সেই সাথে সীমান্তের পাশ দিয়ে বয়ে চলা রেললাইনে ঘুরছেন।
বগুড়া থেকে আসা স্বাগত সাহা বলেন, সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে দুই বাংলাকে ভাগ করে দিলেও আমাদের মনকে তো আর ভাগ করতে পারেনি। আগে তো দুই বাংলা একই ছিল। আমাদের যেমন অনেক আত্মিয় স্বজন ভারতে রয়েছে তেমনি তাদের অনেক আত্মীয় স্বজন রয়েছে বাংলাদেশে। আর প্রতিবছর এই দুর্গাপুজাকে ঘিরে আমরা অধির আগ্রহে থাকি ভারতে থাকা আত্মিয় স্বজনের সাথে দেখা সাক্ষাত করতে পারবো।
অন্যান্য বছর সময় দিতো এতে ভারতে থাকা আত্মিয় স্বজনের সাথে দেখা সাক্ষাত করতে পারতাম। কিন্তু এবারে এসে আর দেখা সাক্ষাত করতে পারছিনা শুধু দুর থেকে হাত নেড়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে হচ্ছে যার কারনে কষ্ট নিয়ে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। কলকাতা থেকে আমার আত্মিয় স্বজন এসেছিল দেখা করতে কিন্তু সম্ভব হলোনা। আমাদের অনুরোধ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে অন্তত একটি দিন ৫/১০ মিনিট দেখা করার সুযোগ দিতো তাহলে ভালো হতো।
গাইবান্ধা থেকে আসা স্মৃতি রানী বলেন, আমরা পাসেপার্ট করে ভারতে পুজা দেখতে যেতে পারছিনা এর জন্য আমাদের মন খুব পুড়ছে। কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশ থেকে ভারতের পুজা কেমন হয় সেটি অনুভব করতে হিলি সীমান্তে এসেছি। ভারতে পুজা খুব সুন্দর হচ্ছে বলে অনুভব করছি। কিন্তু চোখ দিয়ে পরখ করে দেখার ইচ্ছা থাকলেও যেতে পারছিনা। তাই দুর থেকে যতটুকু অনুভুব করা যায় সেটাই করছি।
দিপা রানী বলেন, আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে হিলি সীমান্ত এলাকা ও ভারতের পুজা দেখার জন্যই এসেছি। কখনো আমরা দেখিনি শুনেছি এখান থেকে নাকি ভারতের প্রতিমা দেখা যায় সেটি দেখার জন্যই মূলত আমাদের আশা। এখান থেকে যতটুকু দেখলাম তাতে ভালোই লাগলে যদি ওপারে যেতে পারতাম তাহলে আরো ভালো লাগতো।
কৃষ্ণ চন্দ্র রায় বলেন, আমার শ্বশুর ও শ্বাশুড়ি ভারতে থাকে তাই তাদেরকে দেখার জন্য প্রতিবছর হিলি সীমান্তে আসি সেই ধারাবাহিকতায় এবারো হিলি সীমান্তে এসেছি কিন্তু এবার তাদের সাথে দেখাতো হলোনা। বিজিবি যেতেই দিচ্ছেনা সীমানায় যার কারনে খুব কষ্ট লাগছে। গতবছর দেখা হয়েছে তার আগের বছর দেখা হয়েছিল তাদের সাথে।
অপর এক বলেন, আমরা হিলি সীমান্তে পুজা দেখার জন্য এসেছি। ভারতে আমাদের আত্মিয় স্বজন রয়েছে তারাও ওপারে এসেছে। একটু তাদের সাথে দেখা সাক্ষাত করবো কিন্তু বিজিবি যেতেই দিচ্ছেনা যার কারনে দেখা সাক্ষাত করা হলোনা তেমনি ভারতের পুজা দেখাও হলোনা। হাতের ইশারায় দুর থেকে তাদের সাথে মনের ভাব আদান প্রদান করলাম শুধুমাত্র এতটুকুই। কাছ থেকে দেখতে পারলামনা যার কারনে মনে আক্ষেপ থেকেই গেলো যদি যেতে পারতাম তাহলো ভালো লাগতো। বহুবছর পর তাদের সঙ্গে একটু দেখা সাক্ষাত করবো পুজা দেখবো এজন্যই তো হিলি সীমান্তে এসেছিলাম।
তপন চন্দ্র বলেন,ভারতে আমাদের অনেক আত্মিয় স্বজন রয়েছে তাদের সাথে দেখা করতে ও কাছ থেকে কথা বলতে আজকে আমরাও যেমন এখানে এসেছি তেমনি তারাও ওপারে এসেছে। সীমান্তে কড়াকড়ির কারনে আমরা কেউ আর কাছাকাছি যেতে পারছিনা। এই পাড়ে আমরা দাড়িয়ে আছি আর সীমান্তের ওইপাড়ে ভারতে থাকা আত্মিয় স্বজন দাড়িয়ে রয়েছে। শুধু দুর থেকেই তাদের যেমন আমরা দেখছি ওরাও ঠিক তেমনিভাবে আমাদের দেখছে। দুপারে দাড়িয়ে থেকেই চোখের ইশারায় ও হাত নেড়ে ভাব বিনিময় করছি এর মাঝেই মনের মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভতি কাজ করছে।
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.বদিউজ্জামান বলেন, শারদীয় দুর্গাপুজা উপলক্ষ্যে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট দিয়ে পাসপোর্টে যাত্রী পারাপার দ্বিগুন বেড়েছে। সেই সাথে সীমান্তে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। হিলি একটি স্থলবন্দর ও ভারত বাংলাদেশের নিকটতম সীমান্তবর্তী এলাকা। খুব কাছ থেকে বাংলাদেশ থেকে যেমন ভারতকে দেখা যায় তেমনি ভারত থেকে বাংলাদেশকে দেখা যায়। এছাড়া সীমান্তের ভারত অংশে খুব নিকটতম এলাকায় বিশাল আকৃতির একটি দুর্গাপুজার মন্ডপ রয়েছে। অনেকেই দুর থেকে সেই পুজামন্ডপ দেখার জন্য দর্শনার্থীরা শুন্যরেখায় ভিড় করেন।
এএজেড