বাবার খোঁজে করতোয়ার তীরে ছেলে
পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হারিয়ে ছয় দিন থেকে বাবা সরেন্দ্রনাথ বর্মনের লাশের অপেক্ষায় করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে অপেক্ষার প্রহন গুনছেন তপন চন্দ্র বর্মন (৩২)। বাবার দেহের জন্য প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেয়ে না খেয়ে করতোয়ার তীরে বসে অপেক্ষায় থাকেন। পরিবারের সকলকে হারিয়ে বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। তাদের আহাজারি আর দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে উঠেছে পুরো এলাকার আকাশ-বাতাস।
বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের নগর সাকোয়া (কলেজপাড়া) এলাকার বাসিন্দা সরেন্দ্রনাথ বর্মন (৬৩)। তিনি তার বড় মেয়ে কনিকা রানী (৪৫), মেজো মেয়ে পারুল রানী (৪২), ছোট মনিকা রানী (৩৭), বড় জামাই হরিকিশোর (৫০), মেজো জামাই বিনয় চন্দ্র ও ছেলে তপন চন্দ্র বর্মনের শশুড় নিখিল চন্দ্রসহ ছয়জনকে নিয়ে বড়শশী ইউনিয়নের বোদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে আয়োজিত ধর্মসভায় যোগ দেওয়ার জন্য বাড়িতে থেকে একসঙ্গে বের হন। এরপর মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে নৌকায় করে নদী পার হওয়ার সময় ধারণ ক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত যাত্রী উঠায় নদীর মাঝ পথে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় অন্যান্য যাত্রীদের সাথে তারাও পানিতে পড়ে যান। এতে মেজো জামাই বিনয় চন্দ্র বর্মন সাতার কেটে ডাঙ্গায় উঠলেও বাকি পাঁচজন পানির স্রোতে ভেসে যায়। ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হলেও বাবা সরেন্দ্র'র খোঁজ এখনো মেলেনি। বাবার সন্ধানে প্রতিদিন করতোয়ার তীরে বসে থাকেন ছেলে তপন।
তপন ঢাকাপ্রকাশ-কে জানায়, গত রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বড়শশী ইউনিয়নের বোদেশ্বরী মন্দিরে ধর্মসভায় যোগ দিতে মাড়েয়া আউলিয়া ঘাট হয়ে করতোয়া নদী পাড়াপাড়ের সময় নৌকাডুবির শিকার হন। পূজা আর্চনা করতে এসে নদীতে ডুবে আমার পরিবারের ছয়জনকে হারিয়েছি।পাঁচজনের মরদেহ পেয়েছি কিন্তু আজ ৬ দিন পার হয়ে গেলেও বাবার মরদেহ এখনো পাইনি। মাকে কোনোভাবেই শান্তনা দিতে পারছি না। বাবার হাড্ডিটা পেলেও শান্তি পাই।
এর আগে গত রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) শারদীয় দুর্গোৎসবের মহালয়া উপলক্ষে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকায় করে বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিলেন শতাধিক মানুষ। ঘাট থেকে নৌকাটি কিছু দূর যাওয়ার পর দুলতে শুরু করে। এর এক পর্যায়ে নৌকাটি ডুবে যায়। পরে উদ্ধার অভিযান শুরু করে প্রশাসন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ৬৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৩ জন।
স্থানীয়রা জানান, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপর পাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। রবিবার দুপুরের দিকে মূলত ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে সনাতন ধর্মালম্বীরা নৌকাযোগে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে ৫০ থেকে ৬০ জনের ধারণ ক্ষমতার নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল।
এদিকে এ দুর্ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায়কে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় বলেন, তদন্ত কমিটির সদস্যরা নিখোঁজ ব্যাক্তিদের সন্ধান, মরদেহ উদ্ধার এবং পরিবারকে বিভিন্ন সহায়তা প্রদানে সক্রিয় থাকায় তদন্ত প্রতিবেদনের সময় তিন দিন বাড়ানো হয়েছে।
এসআইএইচ