হিলিতে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫ টাকা
চাহিদার তুলনায় আমদানি কমের অজুহাতে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪-৫ টাকা। একইভাবে হিলি বাজারে খুচরা পেঁয়াজের দামও বাড়ছে। দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষসহ বন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকাররা।
হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়ে ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে দাম আগের তুলনায় বেশি।৩ দিন আগেও প্রতি কেজি ছোট আকারের পেঁয়াজ প্রকারভেদে ১৮-১৯ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ২২-২৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বড় আকারের পেঁয়াজ ৩ দিন আগে ২২-২৩ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে তা ২৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে হিলি বাজারে ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজি দরে। যা আগে ১৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে কিছু খারাপ মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬ টাকা কেজি দরে।
হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা আইয়ুব আলী বলেন, কয়েকদিন আগে দাম কম থাকায় পেঁয়াজ কিনতে সুবিধা হয়েছিল, পুঁজিও কম লেগেছিল। কিন্তু বর্তমানে আবারও পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এতে পুঁজি বেশি লাগছে। এ ছাড়া বন্দর থেকে একদামে পেঁয়াজ কিনে যাচ্ছি পরে আবার কিনতে এসে সেই দামে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে পেঁয়াজ কিনতেই ভয় লাগছে।
হিলি বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা মোস্তাকিম হোসেন বলেন, প্রতিদিনই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। এবার সেই তালিকায় নতুন করে যোগ হলো পেঁয়াজ। কয়েকদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে কেজিতে ৪ টাকা। এভাবে যদি সব পণ্যের দাম বাড়ে তাহলে আমরা চলব কীভাবে। আমাদের তো আর সেভাবে আয় বাড়ছে না যে দাম বাড়লেও কোনো সমস্যা হবে না।
পেঁয়াজ কিনতে আসা লাভলি আকতার বলেন, গত কয়েকদিন পেঁয়াজের দাম কম ছিল। ১৫-১৬ টাকার মধ্যে ছিল। এতে সহজেই পেঁয়াজ কিনতে পেরেছি। কিন্তু আবারও পেঁয়াজের দাম বাড়তি। ২০ টাকায় উঠে গেছে। এভাবে দাম বাড়লে সংসারের খরচ মেটানো অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই দামটা যদি কম থাকে তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়।
হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা শাকিল খান বলেন, হিলি বাজারে সাধারণত যেসব পেঁয়াজ বিক্রি করা হয় তা বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত ব্যালেন্স পেঁয়াজ। এসব পেঁয়াজ কিছুটা নিম্নমানের। এ কারণে তুলনামূলক দাম কম থাকে। তবে এসব পেঁয়াজের দাম আগে আরও কম ছিল। পূজার কারণে বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে। এ কারণে বন্দরেই আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম বেশি। এতে খুচরা বাজারেও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী স্বপন হোসেন জানান, আর কয়েকদিন পরেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে ভারতে ক্ষেত থেকে কৃষকরা পেঁয়াজ উত্তোলন বন্ধ রাখবেন। তেমনি পেঁয়াজের মোকামগুলো কয়েকদিন বন্ধ থাকবে। সেই সঙ্গে পূজার কারণে হিলিসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে যথাক্রমে ৮-১০ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে। এ সময়ে দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন মোকামগুলো পেঁয়াজ কিনে স্টক করছে। তাই আগের তুলনায় পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। এ ছাড়া বৃষ্টিপাতের কারণে গত কয়েকদিন পেঁয়াজ খারাপ আসায় আমদানিকারকদের লোকসান করে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়েছিল। এতে পেঁয়াজের আমদানি কিছুটা কমিয়ে দিয়েছিলেন আমদানিকারকরা। বর্তমানে আবহাওয়া ভালো থাকায় আমদানিকৃত পেঁয়াজের মান ভালো রয়েছে। দেশের বাজারে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের চেয়ে ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়তি দামে ভারত থেকে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। ফলে দেশের বাজারেও দাম বাড়ছে।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি অব্যাহত রয়েছে। গত সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন ২৫-৩০ ট্রাক করে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার বন্দর দিয়ে ৩২টি ট্রাকে ৯১২ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে একদিন বন্ধের পর আজ শনিবার বন্দর দিয়ে পুনরায় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে।
এসজি