হিলি বন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধ, কেজিতে বাড়ল আতপ চালের দাম
ভারতে আতপ চালের উপর ২০ ভাগ শুল্ক আরোপ করায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১৩ দিন ধরে আতপ চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। তবে বন্দর দিয়ে সিদ্ধ চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। শুল্ক আরোপের ফলে চাল আমদানিতে লাভ না হওয়ায় আতপ চাল আমদানি বন্ধ রেখেছেন আমদানিকারকরা। এদিকে চালের আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে বাড়ছে আতপ চালের দাম। কেজিতে ৫/৬ টাকা করে বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরে চাল কিনতে আসা পাইকাররা।
হিলি স্থলবন্দরের বিভিন্ন চালের আমদানিকারকদের গুদাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেকটি আমদানিকারকের গুদামেই কম বেশি আতপ চাল রয়েছে। তবে দাম একটু বেশী। পূর্বে ৩৬ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪১ থেকে ৪২টাকা কেজি দরে।
হিলি স্থলবন্দরে চাল কিনতে আসা পাইকার আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি সিলেট থেকে হিলি স্থলবন্দরে আতপ চাল কিনতে এসেছি। কয়েকদিন আগে বন্দর থেকে আতপ চাল কিনে নিয়ে গেছি ৩৬টাকা কেজি দরে কিন্তু বর্তমানে দাম বাড়তি চাচ্ছে। কোন কোন ঘরে ৪২ টাকা আবার কেউ কেউ ৪৩ টাকা দাম চাইছে। বাড়তি দামের কারণে আমরা তো চাল কিনতে পারছি না। কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা করে বেড়ে গেছে আতপ চালের দাম। সেই সঙ্গে ট্রাক ভাড়াও বাড়তি। যে চালের টন প্রতি ভাড়া ছিল ১৪০০ টাকা সেটি বেড়ে ১৭০০ টাকা হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে চাল কিনতে এসে বিপাকের মধ্যে পড়ে গেছি।
হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক ললিত কেশেরা বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির যে অনুমতি সরকার দিয়েছে আতপ চাল আমদানির সেই অনুমোদন আমি পেয়েছি। কিন্তু ব্যাংকে ডলারের যে দাম উঠানামা করছে তাতে করে চালের এলসি খুলে চাল আমদানি করে লাভ নেই। এরপরেও অনুমোদনের পর চাল আমদানি করে ৪০ টাকার চাল ক্রেতা সংকটের কারনে লোকশান দিয়ে ৩৬ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। পরবর্তীতে দেশে চালের শুল্ক কমালেও ভারতে আবার আতপ চাল রপ্তানিতে ২০ ভাগ শুল্ক আরোপ করেছে। এতে করে ভারতের বাজারে আতপ চালের দাম বাড়তি। এর উপর ডলার রেটের কোনও স্থিতিশীল অবস্থা নেই, যার কারণে এলসি থাকলেও ভারতে বাড়তি শুল্ক দিয়ে আপাতত চাল আমদানি বন্ধ রেখেছি।
হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,বন্দর দিয়ে শুধুমাত্র সিদ্ধ চাল আমদানি অব্যাহত রেখেছেন আমদানিকারকরা। আর আতপ চালে ভারতে শুল্ক আরোপের কারণে আমদানি বন্ধ রেখেছেন আমদানিকারকরা। শুল্ক বাড়ার কারণে ভারতের রপ্তানিকারকরা আতপ চালের দাম পূর্বের চেয়ে বাড়তি চাইছেন। সেই সাথে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা আতপ চাল রপ্তানি করতে নিরুৎসাহিত বোধ করছেন যেহেতু সেই চাল রপ্তানিতে তাদের নিজেদের শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। ২০ ভাগ শুল্ক আরোপের ফলে ভারতে প্রতি কেজিতে ৪ টাকার মতো শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। যেটি
এত দিন ধরে লাগতো না। এর ফলে অনেক রপ্তানিকারক আতপ চাল রপ্তানি করতে চাইছে না। এদিকে আমদানিকারকরা আতপ চাল আমদানি বন্ধ রাখায় ভারতের বাজারে আতপ চালের দাম কিছুটা ভালোর দিকে কিন্তু তারপরেও লাভ না থাকায় আমদানি বন্ধ রেখেছেন আমদানিকারকরা। পোষানোর মধ্যে চলে আসলে আবারো ভারত থেকে আতপ চাল আমদানি শুরু হবে। এতে করে দেশের বাজারে এই চালের দাম কমে আসতে পারে। তবে এই চাল শুধুমাত্র সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলে। যার কারণে আমদানি বন্ধ থাকলেও তেমন একটা প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, চালের আমদানি শুল্ক ৬২.৫ থাকায় গত ৩১ অক্টোবর থেকে বন্দর দিয়ে চাল আমদানি বন্ধ ছিল। সম্প্রতি চালের আমদানি শুল্ক ৬২.৫ ভাগ থেকে কমিয়ে ২৫ ভাগ করলে দীর্ঘদিন বন্ধের পর গত ২৩ জুলাই থেকে বন্দর দিয়ে পুনরায় চাল আমদানি শুরু হয়। এ সময় বন্দর দিয়ে আতপ ও সিদ্ধ চাল আমদানি অব্যাহত ছিল তবে পরিমাণ কম ছিল। ২৮ আগষ্ট আমদানি শুল্ক ২৫ ভাগ থেকে কমিয়ে ১৫ভাগ করলে বন্দর দিয়ে চালের আমদানি বাড়তে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি ভারতে চালের উপর শুল্ক আরোপ করায় বন্দর দিয়ে আতপ চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। তবে সিদ্ধ চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। বন্দর দিয়ে ২৩ জুলাই থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৪৬টি ট্রাকে ১৪ হাজার ১৮৮ টন আতপ চাল আমদানি হয়েছে। এর পরে ১০ সেপ্টেম্বর ১৯টি ট্রাকে ৭৫৩ টন আতপ চাল আমদানি হয়েছে। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর বন্দর দিয়ে মাত্র ১টি ট্রাকে ৫০টন আতপ চাল আমদানি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভারতের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ৮ সেপ্টেম্বর আতপ চালের উপর ২০ ভাগ শুল্ক করে ভারত সরকার। সেই সাথে ব্রোকেন রাইস বা ভাঙ্গা চাল (খুদ) রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ছাড়াও ব্রাউন চালে ২০ ভাগ ও হাস্ক নামের একটি চাল রয়েছে, তাতে ২০ভাগ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে সিদ্ধ চালে কোনো শুল্ক আরোপ করেনি ভারত।
এসআইএইচ