বাবার লাশ বাড়িতে রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল মেয়ে
নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় বাবার লাশ বাড়িতে রেখেই এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে নমিতা রানী ঝাঁ নামে এক শিক্ষার্থী। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের বাকডোকরা শিয়ালডাঙ্গাা গ্রামে।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টার দিকে নমিতা রানীর বাবা সুনীল চন্দ্র ঝাঁ মারা যান। এদিন সকাল ১১টায় পরীক্ষায় অংশ নেন নমিতা রানী। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে এসে বাবার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অংশ নেয় সে।
সুনীল চন্দ্র ঝাঁ বাকডোকরা শিয়ালডাঙ্গা এলাকার সচ্চিকা নন্দ ঝাঁ সচিনের ছেলে। নমিতা রানী উপজেলার নিমোজখানা বাকডোকরা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে চলতি বছর মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। শনিবার তার বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা পরীক্ষা ছিল। এদিন সকালে বাবা মারা যাওয়ায় ভেঙে পড়ে নমিতা রানী। পরে স্বজনদের পরামর্শে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয় সে।
স্থানীয়রা জানায়, শনিবার সকাল ৬টার দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান নমিতার বাবা সুনীল চন্দ্র। বাবাকে হারিয়ে ভেঙে পড়ে তিন ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট নমিতা রানী। অন্যদিকে সকাল ১১টায় তার বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা পরীক্ষা। বাবার মৃত্যুতে বারবার মূর্ছা যাওয়া নমিতার পক্ষে পরীক্ষা দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এসময় তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা তাকে বুঝিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠায় এবং সে ডোমার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয়।
ডোমার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, খবরটি শুনে আমরাও শোকাহত। আমরা তাকে বুঝিয়ে তার বিষয়টি অনুধাবন করে তার পরীক্ষা নিই। খবর পেয়ে ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রমিজ আলম নমিতা রানীর কাছে এসে তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন। পরীক্ষা শেষ হলে তাকে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
পরীক্ষা শেষে বাড়ি পৌঁছে বাবার লাশের পাশে বসে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিল নমিতা রানী। বাড়ি পৌঁছার আধাঘণ্টা পর তার বাবার লাশ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রমিজ আলম বলেন, খবরটি শুনে আমি পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে নমিতা রানীর সঙ্গে দেখা করে তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করি। পরীক্ষাকেন্দ্রে তার যেন কোনো অসুবিধে না হয় সে বিষয়ে কেন্দ্র সচিবকে ব্যবস্থা নিতে বলি। বিকালে নমিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য তার বাড়িতে যাবেন বলেও জানান তিনি।
এসজি