নীলফামারীতে জাল সনদে চাকরি করছেন ২৪ জন শিক্ষক
সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাল সনদে চাকরিরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগ (ডিআইএ) রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলে জাল সনদে চাকরিরত শিক্ষকদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও ৪র্থ পর্বের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই দুই অঞ্চলের চার পর্বের তালিকায় নীলফামারীর ২৪ জন শিক্ষকের নাম পাওয়া গেছে।
ডিআইএ'র তথ্য মতে, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের ২৫ মে পর্যন্ত দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শুদ্ধি অভিযানে ১ হাজার ১৫৬ জন শিক্ষকের শিক্ষাগত ও যোগ্যতার সনদ ভুয়া পেয়েছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগ (ডিআইএ)। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জাল সনদধারী শিক্ষক রয়েছেন ৪৪৩ জন। এজন্য ওই সব শিক্ষককে দেওয়া বেতন-ভাতা ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
আরও জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলে জাল সনদে চাকরি নেওয়া শিক্ষকদের তালিকায় জেলার ২৪ জনের মধ্যে ১৯ জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত এবং বাকি ৫ জন শিক্ষক ননএমপিওভুক্ত।
জাল সনদধারী শিক্ষকরা হলেন, নীলফামারী সদরের চাঁদের হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক রাদিফা বেগম, দুহুলি উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মোছা. ছাবিনা ইয়াছমিন ও মোছা. রওশন আক্তার। জলঢাকা উপজেলার জলঢাকা দ্বি-মুখী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষক মুকুল হোসেন, মীরগঞ্জ হাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক আইয়ুব আলী, বালাপাড়া দ্বী-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক অনাথ চন্দ্র রায়। কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদ খানা উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক শিরিনা আক্তার, মাগুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক মো. লতিফুজ্জামান, মনিকা রানী রায় ও ইংরেজি শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক।
ডিমলা উপজেলার সোনাখুলী চাপানী সৈকত নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আশরাফ হোসেন, জটুয়াখাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্ম শিক্ষক সাইফুর রহমান, ছাতনাই কলোনি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মফিজুর রহমান, খড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক নাজিয়া আলম, তিস্তা কলেজের কম্পিউটার প্রভাষক আব্দুর রাজ্জাক ও বালাপাড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক আনোয়ারুল হক।
সৈয়দপুর উপজেলার সাতপাই উচ্চ বিদ্যালয়ের আজিজুল ইসলাম ও ধর্ম শিক্ষক আব্দুল মতিন। তারা এমপিওভুক্ত শিক্ষক বলে জানা গেছে।
নীলফামারী সদরের ছমির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা প্রভাষক মোছা. তামান্না সুলতানা, ডোমার উপজেলার কেতকি বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলা শিক্ষক মোছা. আকলিমা বেগম, বামুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মো. জহুরুল হক, সৈয়দপুর উপজেলার লক্ষ্মণপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের জীব বিজ্ঞানের প্রভাষক মোছা. মেরিনা মান্নান ও সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাষক মো. মজিবুর রহমান, ডিমলা উপজেলা জটুয়াখাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক আলমগীর রহমান (নন এমপিওভুক্ত)।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগ (ডিআইএ) প্রদত্ত জাল সনদে শিক্ষকদের চাকরি নেওয়ার বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। যদি উপর থেকে নির্দেশনা আসে, আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ ব্যাপারে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (ডিআইএ) প্রফেসর অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আমাদের কাছে ১০ বছরে কতগুলো প্রতিষ্ঠান পরির্দশন এবং কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার একটি হিসাব চেয়েছে। আমরা উত্তরে কতগুলো প্রতিষ্ঠান পরির্দশন করেছি তা জানিয়েছি। ডিআইএ’র পক্ষ থেকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনে জাল সনদের বিষয় অনেক আছে। ওখানে বিশেষ করে এনটিআরসি সনদ, কম্পিউটার সনদ, গ্রন্থাগার সনদসহ এ রকম কিছু বিষয়ে ওই শিক্ষকদের সনদ সঠিক পাওয়া যায়নি।
এসআইএইচ