১০ বছর ধরে অচল রংপুর আবহাওয়া অফিসের রাডার
রংপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্যের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। রংপুর আবহাওয়া অফিসের প্রায় ১০ বছর যাবৎ অকেজো রাডারটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর অবশেষে চলতি বছরেই জাপানের অনুদানে নতুন রার্ডার চালু হবার কথা থাকলেও এখনো হয়নি। করোনার কারণে গত বছরের অক্টোবরে ভবন নির্মাণের ও অফিস ইনডোরেরর কাজ চলছে ঢিমেতালে।
আবহাওয়া অফিসের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে দুটি রার্ডার নির্মাণ করছে জাপানিরা। এখন তাদের নির্মাণ কাজ চলছে গাজীপুরে। ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গাজীপুরে ২০ তলা বিশিষ্ট আবহাওয়া ভবন নির্মাণের পর সেই ভবনে বসানো হবে নতুন রাডারটি। আর এ কাজ শেষ হলে রংপুরে আরেকটি রার্ডার নির্মাণের কাজ শুরু করবে তারা।
রংপুর আবহাওয়া অফিস জানায়, কালবৈশাখীর ঝড়ের আগাম তথ্য দেওয়া,৫০০ কিলোমিটার দূরের মেঘ পর্যবেক্ষণ করতে পারা,২৪ ঘণ্টা পূর্বে কালবৈশাখী ঝড় নিরুপন করতে পারে এমন শক্তিশালী আধুনিক রাডার রংপুর আবহাওয়া অফিসে স্থাপন ও চালু হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ ভূ-কম্পনের আগাম সংকেত পেতে আর বিলম্ব হবে না বৃহওর রংপুরসহ দেশবাসীর।
এ বিষয়ে রংপুর আবহাওয়া অফিসের প্রকৌশলী ও সহকারী আবহাওয়াবিদ এ কে এম কারুল হাসান বলেন, রংপুর নগরীর আলমনগর এলাকায় ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে ২ দশমিক ৫০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে নিজস্ব ভবনে স্থাপন করা হয় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের অধীনে আবহাওয়া, রাডার ও ভূকম্পন পর্যবেক্ষণাগার। প্রতিদিনের আবহাওয়া, ভূমিকম্প পরিমাপসহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য ঢাকা প্রধান অফিসকে সহায়তার উদ্দেশে এর যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৯ সালে জাপান সরকারের অর্থায়নে এবং তাদের কারিগরি সহায়তায় প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে রাডারটি স্থাপন করা হয়। নয় বছর মেয়াদের রাডারটি ২০০৯ সাল পর্যন্ত চালু থাকার পর ক্রটি দেখা দেয়। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আবহাওয়ায় উৎপত্তি হয় কালবৈশাখীর। এই ঝড়ের আগাম তথ্য দিবে রংপুর আবহাওয়া অফিসের রাডারটি। রাডারটি প্রায় ১০ বছর যাবৎ অকেজো হওয়ায় বর্তমানে এলাকাবাসীকে ঢাকা আবহাওয়া অফিসের বিলম্ব তথ্যের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে পর্যবেক্ষণগার, ভূমিকম্পন মেশিন চালু থাকায় তেমন সমস্যা হচ্ছে না। রাডার কেন্দ্রটি চালু হলে উন্নয়নের একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হবে রংপুর বিভাগে। এতে বৃষ্টিপাতের আগাম ধারণা পাওয়া যাবে,তাপমাত্রাসহ আরো অনেক আগাম তথ্য। জলীয় বাস্প নিরুপনের পুরাতন ও আধুনিক যন্ত্র দিয়ে চলছে এখন রংপুর আবহাওয়া অফিসের কার্যক্রম। বর্তমানে আবহাওয়া অফিসে টেম্প্রেচার, বায়ুর চাপ ও ভূকম্পন জানানোর মেশিন সচল রয়েছে। বর্তমানে আমরা উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা সরাসরি ঢাকায় প্রতি ৩ ঘন্টায় বিভিন্ন ম্যাসেজ ও ছবি সরবরাহ করছি।
এ প্রসঙ্গে রংপুর আবহাওয়া অফিসের রার্ডারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলেকট্রনিক সহকারী মোঃ আব্দুস সোহান বলেন, গত ২১ সালে রাডার স্থাপনের দরপত্র হয়ে গেছে। ১৯৯৯ সালে জাপান সরকারের অনুদানে ও কারিগরি সহায়তায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাডারটি স্থাপন করা হয়। এটি চালু থাকার সময় প্রায় ৫০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঘন কুয়াশা, সাধারণ মেঘ, মাঝারি মেঘ, ঘন মেঘ এবং ঘূর্ণিযুক্ত মেঘের তথ্য পর্যবেক্ষণ করা হতো। ফলে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আগাম ব্যবস্থা নেওয়া যেত। এরপর ২০০৬ সালে জাপান ও বাংলাদেশের টেকনিশিয়ানরা কোনো রকমে চালু করলেও বর্তমানে রাডারটি স্পেয়ার পার্সের অভাবে প্রায় ১০ বছর যাবৎ বিকল হয়ে পড়ে আছে। এই রাডারটি জাপান সরকার তৈরির পর আরো দুই প্রকারের রার্ডার তৈরি করেছে। ফলে এই রার্ডারের স্পেয়ার পার্স তারা তৈরি করেন না। এখন আবার নতুন করে রাডার নিতে হচেছ বাংলাদেশ সরকারকে।
তিনি আরও বলেন, ১০ বছর মেয়াদের রাডারটি ২০০৯ সাল পর্যন্ত চালু থাকার পর যান্ত্রিক ক্রটি দেখা দেয়। রংপুর মহানগরীর কলেজ রোড এলাকায় নিজস্ব ভবনে স্থাপন করা হয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের অধীন আবহাওয়া, রাডার ও ভূকম্পন পর্যবেক্ষণাগার। প্রতিদিনের আবহাওয়া, ভূমিকম্প পরিমাপসহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য ঢাকা প্রধান অফিসকে সহায়তা করতে এটি রংপুরে স্থাপন করা হয়েছিল। ২০১২ সাল পর্যন্ত জোড়াতালি দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে রাডারটি চালু রাখলেও পরে তা পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়। দেশে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য রংপুরসহ এ ধরনের রার্ডারের সুবিধা রয়েছে ৫টি স্থানে। রংপুরের রাডারটি বিকল হওয়ায় বর্তমানে চালু রয়েছে ৪টি। দেশের কক্সবাজার, পটুয়াখালীর খেপুপাড়া, ঢাকা এবং সিলেটের মৌলভীবাজারে।
রংপুর কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ওবাইদুর রহমান মন্ডল বলেন, রংপুর অঞ্চল কৃষিপ্রধান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিনে দিনে কৃষি কাজ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম বার্তা জানতে না পারায় কৃষকদের জন্য তা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। কৃষকরা আবহাওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি জানতে পারছে না। তবে আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে কৃষকদের পরামর্শ প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
রংপুর আবহাওয়া, রাডার ও ভূকম্পন পর্যবেক্ষণাগারের সাবেক ইনচার্জ প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান বলেন, জাপানি নাগরিক ‘হোশি কোনিও নিহতের পর উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জাপানি প্রকৌশলীরা বেশ কিছু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রংপুর আবহাওয়া অফিসে পুলিশ ব্যারাক এবং তাদের থাকার জন্য ডর্মেটরি নির্মাণ এবং সীমানা প্রাচীরের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ করা হয়। এমনকি সেই সময় যে জাপানি প্রকৌশলীরা এখানে কাজ করবেন তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একটি টিম সাইট পরিদর্শন করে গেছেন। এ সময় তারা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাগুলো স্বচক্ষে দেখেন এবং সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু পরে করোনার কারণে আবার বাধাগ্রস্ত হয় নতুন রাডার স্থাপনের কাজ। প্রথমে জাপানি নাগরিক হত্যা এবং পরে করোনার কারণে নতুন রাডার স্থাপনের কাজ বিলম্বিত হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি আরও বলেন,আগের রাডারটি ছিল ম্যানুয়াল। আগামীতে যে রাডার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে ডপলার রাডার (আধুনিক)। এটি চালু হলে এই কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দুরের স্থানের আকাশের ঘন কুয়াশা, সাধারণ মেঘ, মাঝারি মেঘ, ঘন মেঘ, বর্জ্য মেঘ এবং ঘূর্ণিযুক্ত মেঘের তথ্য পর্যবেক্ষণ দ্রুততার সঙ্গে সম্ভব হবে। ফলে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। এতে জানমালের ক্ষতি কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান বলেন,এখন ঢাকার গাজীপুরে রার্ডার স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী জানুয়ারি মাসে রংপুরে অত্যাধুনিক ডপলার রার্ডার স্থাপনের কাজ শুরু হবে। বাংলাদেশে দুটি এই অত্যাধুনিক রাডার আনা হয়েছে।
এসআইএইচ