অফিস ৮টায়, কর্মকর্তারা আসেন কয়টায়?
ও তিরিশ টাকা কেজি মাছ, বাবু পেয়ে খাবে লো- জল দিয়ে বেশি করিস না। আটটা বাজে দেরি করিস না। বাউল এ গানে জেলেদের আটটা বাজার সাথে সাথে তাগিদ দিলেও সরকারের দেওয়া তাগিদ যেনো শুধুই পিয়ন দ্বারাই সাড়া। দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্য সরকারি অফিসের সময়সূচি পরিবর্তন করে সকাল ৯ টার পরিবর্তে ৮ টায় করা হলেও নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আসছেন না কর্মকর্তারা। যে যার মতো করে নিজ নিজ ইচ্ছানুযায়ী দপ্তরে উপস্থিত হচ্ছেন, আর দুপুরে বিদায় নিচ্ছেন। এসব যেন দেখার কেউ নেই। এতে সাধারণ মানুষ সেবা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ঘুরে ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরে দেখা গেছে, দাপ্তরিক সময়সূচি অনুযায়ী অধিকাংশ কর্মকর্তাই সকাল ৮ টায় আসছেন না। কর্মকর্তারা দপ্তরে না আসলেও নিজ নিজ দপ্তরের পিওন দিয়ে দপ্তর খুলে রেখে বোঝানোর চেষ্টা করছেন তারা দপ্তরে এসেছেন।
এদিকে নিজ কর্মস্থল থেকে অফিস করার নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মঈন উদ্দিন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রীতা মন্ডল, সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আখতারুজ্জামান, নির্বাচন কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী, সহকারী প্রোগ্রামার তাসলিমা খাতুন। তারা নিজ বাড়ী দিনাজপুর, সৈয়দপুর ও বদরগঞ্জ থেকে প্রতিদিন বাস ও ট্রেনে এসে অফিস করছেন।
সকাল ৮ টা ৫৫ মিনিটে উপজেলার 'প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার' কার্যালয়ে দেখা যায় তালা ঝুলতে। অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকলেও দেখা মিলেনি ওই কর্মকর্তা শফিউল ইসলামের। একই সময়ে 'তথ্যসেবা কর্মকর্তার' কার্যালয়ে একজন কর্মচারী ছাড়া পুরো অফিস ফাঁকা দেখা যায়। কর্মকর্তা রোকসানা খাতুন নার্গিসের কক্ষও ফাঁকা ছিল।
সকাল ৮ টা ৫৬ মিনিটে 'উপজেলা প্রকৌশলী' কার্যালয়ে দেখা যায়, দরজা লাগানো রয়েছে। সেখানকার এক কর্মচারী বলেন, স্যার হয়তো ফিল্ডে গেছেন। সকাল ৮ টা ৫৭ মিনিটে দেখা যায় 'উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামারের' কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। সেখানে মিলেনি কোনো পিওন কিংবা ওই কর্মকর্তা তাসলিমা খাতুনের দেখা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই কর্মকর্তা দিনাজপুর থেকে অফিস করেন তাই আসতে দেরি হয়।
সকাল ৯ টা ১ মিনিটে 'উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট' কার্যালয়ে দুই জন কর্মচারী ছাড়া পুরো অফিস ফাঁকা দেখা যায়। সকাল ৯ টা ৩ মিনিটে 'উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়েও কর্মকর্তা শূন্য ছিল দপ্তর'। কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন দিনাজপুর থেকে অফিস করেন তাই আসতে দেরি হয়। একই সময়ে অফিসের অন্যান্য কর্মচারীরা অফিসে থাকলেও কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলীর কক্ষ ফাঁকা। তিনি নিজ বাড়ী বদরগঞ্জ থেকে অফিস করেন বলে আসতে দেরি হয়।
সকাল ৯ টা ৬ মিনিটে 'উপজেলা জনস্বাস্থ্য' কার্যালয়ে গিয়ে দেখা মিলেনি কারো। অফিস খোলা থাকলেও ছিলেন না পিয়ন, কর্মচারী বা কর্মকর্তা সোহানুর রহমান সুমন। সকাল ৯ টা ৬ মিনিটে 'উপজেলা সমাজসেবা' কার্যালয়ে দেখা যায়, অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর উপস্থিত থাকলে। কর্মকর্তা দিনাজপুর নিজ বাড়ী থেকে অফিস করেন তাই আসতে দেরি হয়।
সকাল ৯ টা ৮ মিনিটে 'উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার' কার্যালয়ে একজন পিয়ন ছাড়া দেখা মিলেনি অন্য কারো। শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাম্মৎ হাসিনা ভূঁইয়ার কক্ষও খোলা থাকলেও তা ফাঁকা ছিল কক্ষ। ফাঁকা ছিল সহকারী শিক্ষা অফিসার নূরুজ্জামান মিঞা, রেজাউল ইসলাম ও আতিকুর রহমানের কক্ষও। সকাল ৯ টা ১৫ মিনিটে 'উপজেলা মহিলা বিষয়ক' কার্যালয়ে আয়া ছাড়া মিলেনি অন্যকারো দেখা।
জানা যায়, তিনিও দিনাজপুর নিজ বাড়ী থেকে অফিস করেন তাই আসতে দেরি হয়। তহমিনা বেগমের বাড়ী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে। তিনি সকাল ৯টায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জানতে এসেছেন। কিন্তু অফিসে এসে কর্মকর্তাকে না পেয়ে উপজেলার পরিষদ চত্বরে অপেক্ষা করছিলেন।
তিনি বলেন, শুনেছি সকাল সকাল অফিস শুরু তাই সকালেই এসেছি। কিন্তু এসে কাউকেই পাইনি। ৯ টা ১৫ মিনিট বেজে গেলেও এখনও কেউ নেই অফিসের পিয়ন ছাড়া। ভাবছিলাম এখানে কাজ শেষে অন্য কাজে যাবো। কিন্তু সেটা আর হলো না। ৮ টার অফিস সাড়ে ৯টাতেও কর্মকর্তারা অফিসে উপস্থিত না থাকার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমরাও খেয়াল করেছি, আজ (বৃহস্পতিবার) মিটিংয়ে এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করা হবে।
এএজেড