পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা
জন্ম থেকেই দুই হাত নেই মানিক রহমানের। তবে দমে যায়নি। অংশ নিয়েছে এবারের এসএসসি পরীক্ষায়। পা দিয়ে লিখেই দিচ্ছে পরীক্ষা। পা দিয়ে লিখলেও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় তার লেখা মাধুর্যপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ৮নং কক্ষে বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষার দিতে দেখা যায় মানিককে।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের বাসিন্দা মানিক। তার বাবা মিজানুর রহমান একজন ক্ষুদ্র ওষুধ ব্যবসায়ী। মিজানুর রহমানের বড় ছেলে মানিক। জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেড়ে উঠে সে। দুই হাত না থাকলেও পড়ালেখা থেকে কখনো পিছিয়ে পড়েনি মানিক। কেবল পড়ালেখা নয়, পা দিয়েই কম্পিউটার টাইপ, ইন্টারনেট ব্যবহারসহ বিভিন্ন কাজে পারদর্শী মানিক।
২০১৬ সালে মানিক জছি মিঞা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসিতে গোল্ডেন এ-প্লাস পায়। আর ২০২০ সালে ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। তার এই ফলাফলের পেছনে মা মরিয়ম বেগমের অবদানই বেশি।
মানিক রহমান বলেন, আমার দুটো হাত না থাকলেও আল্লাহ রহমতে পিইসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ-প্লাস ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন যেন এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারি এবং ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও প্রতিবন্ধী মানিকের বাবা মিজানুর রহমান ও মা মরিয়ম বেগম জানান, আমার দুই ছেলে। মানিক বড়। ছোট ছেলে মাহীম ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে মানিক প্রতিবন্ধী এটা আমরা মনে করি না। জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকলেও ছোট থেকে আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। সমাজে অনেক সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলে-মেয়েদের চেয়েও মানিক পিইসি ও জেএসসিতে ভালো রেজাল্ট করেছে। এটা আমাদের গর্ব। সবাই আমার ছেলেটার জন্য দোয়া করবেন সে যেন সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে। সে এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে তার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।
ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার জানান বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মানিক অসাধারণ শিক্ষার্থী। সে আমাদের বিদ্যালয়ের সম্পদ। সে ডান পায়ে বুড়ো আঙুলের ফাঁকে কলম ধরে লিখে আর বাম পা দিয়ে প্রশ্ন ও খাতার পাতা উল্টাতে পারে। এভাবে পরীক্ষা দিয়ে সে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। সে যেন পিইসি ও জেএসসির মতোই এসএসসিতে গোল্ডেন এ-প্লাস পায় সেজন্য শুভকামনা রইল।
মানিকের প্রতিভার প্রশংসা করে এই শিক্ষক আরও বলেন, আসলে ওর প্রতিভা আল্লাহ প্রদত্ত। সে পড়ালেখার পাশাপাশি আবৃত্তি ও গানেও পারদর্শী। আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন ওর স্বপ্ন পূরণ করেন।
ফুলবাড়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব মশিউর রহমান বলেন, মানিক রহমান প্রতিবন্ধী হয়েও অন্য শিক্ষার্থীদের মতোই প্রতিটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিতে অসুবিধা হওয়ায় তার জন্য চৌকিতে বসে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া বাড়তি ২০ মিনিট দেওয়াসহ সব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকলেও পা দিয়ে লিখে সুস্থ ও স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের চেয়ে পড়ালেখা ও লেখার ধরন একেবারে আলাদা। পা দিয়ে লিখে কীভাবে এত সুন্দর লেখা হয় এটা খুবই অদ্ভুত ব্যাপার। আমি মানিক রহমানের মঙ্গল কামনা করছি। সে যেন বাবা-মা ও তার স্বপ্ন পূরণ করে আত্মনির্ভরশীল হয়।
এসজি