'প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে ঘুমাইতে-খাইতে পারি না'
নীলফামারীর ডিমলায় প্যারাগন এগ্রো লিমিটেড নামে একটি জৈব সার কারখানার বর্জ্যের দুর্গন্ধ ও বিষাক্ত তামাকের গুঁড়া বাতাসে মিশে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। ফলে অমানবিক জীবন যাপন করছেন আশ্রয়ন প্রকল্পসহ আশেপাশের বাসিন্দারা। অভিযোগ উঠেছে, নীতিমালা উপেক্ষা করে গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অভিযোগ করা হলেও মেলেনি সুফল।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ছাতুনামা গ্রামে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্যারাগন জৈব সার কারখানা। কারখানার চারপাশে মুরগির বিষ্ঠা,গোবর,তামাকের গুড়া ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। অপরিকল্পিতভাবে এসব দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্য রাখা হয়েছে খোলা জায়গায়। যা রোদে শুকালে দুর্গন্ধের মাত্রা আরো কয়েকগুণ বেড়ে বাতাসে মিশে আশপাশের বাতাস ভারী করে তোলে। সাথে স্তুপীকৃত এসব পচনশীল বর্জ্য থেকে ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ ও মশা-মাছি।
কারখানার পাশেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ন প্রকল্প ও মুজিব কেল্লা। আশ্রয়ন প্রকল্পের ৫২টি পরিবারসহ কারখানার চারদিকে আরও পাঁচ শত পরিবারের বসবাস। সার তৈরিতে ব্যবহৃত পচনশীল বর্জ্যের দুর্গন্ধ ও তামাকের গুড়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ায় ওই এলাকায় বসবাস করাতো দুরের কথা নিশ্বাস নেওয়াই দুরূহ হয়ে পড়েছে। ভাত খেতে হয় মশারির তলে। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী, একটি সার কারখানা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ও শিল্প মন্ত্রনালয় থেকে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হতে হবে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং জনগণের ক্ষতি হয় এমন স্থানে কারখানা স্থাপন করা যাবে না।
আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা তোয়াল উদ্দিন, রওশন আরা, জামাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বলেন, হামার ঘড়বাড়ি নাই। প্রধানমন্ত্রী হামাক ঘর দিছে জমি দিছে। কিন্তু সেই ঘরে ঘুমাইতে পারি না, খাইতেও পারি না। আমাদের ঘরের পাশেই সার কারখানা। কারখানার বর্জ্য থেকে সব সময় দুর্গন্ধ ছড়ায়।রোদ বৃষ্টিতে বাতাসে গন্ধ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। দুর্গন্ধে বমি আসে খাওয়া-দাওয়া করা যায় না। গন্ধে ঘুমাতেও কষ্ট হয়। সবচেয়ে সমস্যার সম্মুখীন হন শিশু ও বৃদ্ধরা।
এছাড়া সার তৈরিতে মানুষের মলও ব্যাবহার করেন কারখানা কর্তৃপক্ষ বলে জানান তারা। বর্জ্যের মশা মাছির জালায় মশারির ভেতর ভাত খেতে হয়। দুর্গন্ধে অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে বসবাস করছি।
ঝুনাগাছ চাপানী ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী বলেন, কারখানার বর্জ্যের দুর্গন্ধে আশ্রয়ন প্রকল্পসহ এলাকার বাসিন্দারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। সার তৈরিতে তারা মানুষের মলও ব্যাবহার করছে।এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার হয়নি।
জৈব সার কারখানার প্রোডাকশন অফিসার সাব্বির বলেন, মুরগির খামারের চেয়ে আমাদের এখানে অনেক গন্ধ কম। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ সার উৎপাদন ও বাজারজাতকরনের কোনো সরকারি অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে তবে তা এখনও পাইনি। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
দুর্গন্ধের সত্যতা স্বীকার করে নীলফামারী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কমল কুমার বর্মন জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্যারাগন এগ্রো লিমিটেড জৈবসার কারখানা সরজমিনে তদন্ত করে দুর্গন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় জৈব সার কারখানা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
এএজেড