১ যুগ ধরে কবরস্থানে বসবাস
পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের আসমানি কবিতার চেয়েও রুগ্ন পরিবারটির কোন জায়গা না থাকায় ১ যুগ ধরে কবরস্থানের জায়গায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন। তবে সেই কবরস্থানেও এখন নিশ্চিত নয় তার থাকা কারন নতুন কমিটি তাকে জায়গা খালি করতে বলেছে। সেই চিন্তায় তাকে পেয়ে বসেছে আব্দুল হককে। নিজের কোনো জায়গা-জমি নেই। তাইতো স্থানীয়দের সহযোগীতায় কবরস্থানে ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন ছয় সদস্যের হকের পরিবার। সেখানে নেই পয়ঃনিষ্কাশন ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা।
১২ বছরের বেশি সময় ধরে সেখানে বসবাস করলেও সম্প্রতি কবরস্থান কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদের কথা বলায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবারটি। নীলফামারী সদরের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের আরাজী কলোনি কবরস্থানে গেলে এমন দৃশ্য চোখে পড়বে সকলের। জানা যায়, দীর্ঘ দিন স্কুলশিক্ষক যতীন্দ্র নাথের জমিতে কুঁড়েঘর বানিয়ে বসবাস করে আসছিলেন আব্দুল হক। কিছু দিন পর সেখান থেকে উঠিয়ে দেন ওই স্কুলশিক্ষক।
পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে কবরস্থানের এক কোনায় বসবাসের সুযোগ করে দেন তৎকালীন কমিটি। তখন থেকে আরাজি কলোনি কবরস্থানের জায়গায় সামাজিক সংগঠনের দেওয়া একটি টিনের ঘর ও দুটি টিন ও খড়ের চালায় ঘরে পলিথিনের ছাউনি লাগিয়ে ছেলে, পুত্রবধূ, দুই নাতি এবং স্ত্রী নিয়ে বসবাস করছেন আব্দুল হক। দিনমজুর শ্রমিক হিসেবে কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলছে তাদের সংসার। আর বাকী সময় বাঁশ কিনে ঝাড়ু বানিয়ে বাজারে বিক্রি করেন তিনি।
আব্দুল হক ঢাকা প্রকাশ-কে বলেন, যতীন্দ্র মাস্টারের জমিতে ছিলাম। ওখান উঠায় দেওয়ার পর সকলের সহযোগীতায় কবরস্থানে জায়গা মিললো। এখন নতুন কমিটি এখান থেকে চলে যেতে বলেছে। এখন কোথায় থাকবো কি করবো পরিবার নিয়ে সেই চিন্তায় রয়েছি। একজন হলে কথা ছিল না কিন্তু পরিবার নিয়ে কিভাবে বাইরে থাকবো কোন কিছুই বুঝে আসছেনা। তিনি বলেন সরকার সবাইকে বাড়ী দিচ্ছে আমাকে একটা বাড়ী দিলে আমিও পরিবার নিয়ে থাকতে পারতাম।
আব্দুল হকের ছেলে ওমর আলী বলেন, এখন পরাবার নিয়ে কোথায় যাবো। কি করা উচিত, কার কাছে যাবো কিছুই করতে পারছিনা। তিনি বলেন মানুষের বাড়িতে কাজ করে আমরা খাই। জমি কেনার টাকা নাই। হয়তো পরিবার নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হবে। ওমর আলীর স্ত্রী সুমি বেগম বলেন, কবরস্থানে থাকি। এখান থেকে আমাদের চলে যেতে বলেছে এখন আমরা কোথায় যাব। আমাদেরতো কোন জমি নাই।
স্থানীয়রা বলেন, চাচা খুব অসহায় মানুষ। উনার জমি জায়গা কিছু নাই। কবরস্থানে থাকতেছে। কিন্তু এখন এখানেও থাকতে দেয় না। সরকারের কাছে আবেদন তাদের একটা ঘর দেয়া হোক। তারা আরো বলেন, ওনারা গরিব মানুষ। আমাদের জানা মতে, তাদের কোনো জায়গা-জমি নেই। কবরস্থানে থাকে অনেকদিন ধরে। এখন এখানেও থাকা হবেনা তাদের।
পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম তালুকদার বলেন, সে ভুমিহীন হলে ইউএনও মহোদয়কে বলে ঘরের ব্যবস্খা করে দেওয়া হবে। তবে তাদের আবেদন করতে হবে। আবেদন করলে আমি ভূমিহীনের সার্টিফিকেট করে দেব। ইউএনও স্যারে কাছে দেবে তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার ঢাকা প্রকাশকে বলেন, আমাদের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ হচ্ছে। তিনি যদি প্রকৃত ভূমিহীন হন, তাহলে সেই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে তাকে। তিনি যেন ভুমিহীন হিসেবে ঘরের জন্য আবেদন করে এখানে।
এএজেড