কুড়িগ্রামে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ততায় কাটছে মৃৎশিল্পদের
শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ও দৃষ্টি নন্দন কাঁশবন যেন জানান দিচ্ছে মা দূর্গা দেবীর আগমনী বার্তা। ১ অষ্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা। দূর্গা উৎসবকে ঘিরে গত আড়াই থেকে তিন মাস ধরে মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের। সঠিক সময়ে প্রতিমা ডেলিভারী দেওয়ার লক্ষ্যে পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বাড়তি চার-পাঁচজন শ্রমিক নিয়ে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার রাজারহাট উপজেলা ছিনাই ইউনিয়নে বৈদ্দের বাজার এলাকার মৃৎশিল্পী তপনা চন্দ্র মালাকার,অজয় চন্দ্র রায়, বিপিন চন্দ্র রায়, সনজিৎ চন্দ্র রায় ও বাবলু চন্দ্র রায়সহ আরও অনেকে। শুধু জেলার রাজারহাটে নয় ,জেলার সদর উপজেলাসহ ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী-রাজীবপুর উপজেলাসহ প্রায় শতাধিক মৃৎশিল্পী এ বছর প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
জেলা পূজা উদর্যাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এই জেলাজুড়ে ৪৯০ থেকে ৪৯৫ টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় উৎসব পালনের প্রস্তুতি চলছে। সেই সাথে পূজা মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্যান্ডেল, গেট, তোরণসহ বিভিন্ন ধরনের সাজসজ্জার কাজের প্রস্তুত্তি নিচ্ছে পূজা আয়োজক কমিটি।
রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের বৈদ্দের-বাজার এলাকার মৃৎশিল্পী তপন চন্দ্র মালাকার জানান, বাপ-দাদার পেশা আড়কে ধরে আছি। মৃৎশিল্পীদের কেউ খোঁজ-খবর নেয় না। প্রতি বছর দূর্গা উৎসব আসলে কয়টা টাকার মুখ দেখি। তিনি এ বছর ৯টি প্রতিমা তৈরি করছেন। সঠিক সময়ে প্রতিমা ডেলিভারী দিতে স্ত্রী-সন্তান ও দুই-তিনজন স্থানীয় শ্রমিক নিয়ে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ৯টি প্রতিমা ডেলিভারী দিতে পারলে সব খরচ মিটিয়ে ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হবে। তবে তিনি সারা বছরেই বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি তৈরি করেই কোন রকমে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন পার করেন।
একই ইউনিয়নের দেবালয় এলাকার বাঁশি বাদক ও মৃৎশিল্পী বিপিন চন্দ্র রায় বলেন, তিনিও এ বছর দুইজন মিলে ১৭টি প্রমিমা তৈরি করছেন। প্রতিমা বিক্রি করলে তিনিও ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন বলে জানান।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর দূর্গা উৎসব আসলে বৈদ্দের বাজার এলাকায় প্রতিমা তৈরি করেন। অন্য সময় তিনি জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ রংপুর বেতারেও বাঁশি বাজিয়ে টাকা আয় করে স্ত্রী-সন্তানসহ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন।
তার ভাই বাবুল চন্দ্র রায়ও এ বছর ৮টি প্রতিমা তৈরি করছেন। একই এলাকার সনজিৎ চন্দ্র রায়ও
৭টি প্রতিমা তৈরির অর্ডার পেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জানা গেছে, জেলার সব মৃৎশিল্পীরা প্রতি বছর প্রতিমা তৈরি করে একটা মোটা টাকার মুখ দেখেন। তারা প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি কৃষি কাজসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তবে জেলার অন্য উপজেলার চেয়ে রাজারহাট উপজেলার বৈদ্দের বাজার এলাকায় ২০ থেকে ২৫টি পরিবার প্রতিমা তৈরি করে এই শিল্পটাকে আকড়ে ধরে রেখেছেন। ওইসব পরিবারে দুই-একজন পরিবার সরকারি অনুদান পাইলেও অধিকাংশ পরিবার সরকারি অনুদান থেকে বঞ্চিত বলে অভিযোগ করেছেন।
কুড়িগ্রাম জেলার পূজা উদর্যাপন পরিষদের সভাপতি রবি বোস জানান, ১ অষ্টোবর ৬ষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পাঁচদিন ব্যাপী আমাদের চেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর মা দেবী দূর্গার আগমন ঘটবে গর্জে আর গমন করবেন নৌকায় চড়ে। আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন উপজেলার তথ্যমতে ৪৯০ থেকে ৪৯৫টি মন্দিরে সম্ভাব্য তালিকা করা হয়েছে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে চুড়ান্ত তালিকা করা হবে।
তিনি আরও জানান, ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে প্রতিটি মণ্ডপে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীরের মধ্য দিয়ে শারদীয় দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। শারদীয় দূর্গা উৎসব শান্তির্পূণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহাদয়সহ সকলের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন।
এসআইএইচ