ডিমলায় ৫ শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়, তবুও এমপিওভুক্ত
নীলফামারীর ডিমলায় গয়াবাড়ী ইউনিয়নে মর্ডান নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না থাকলেও গত জুলাই মাসে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে । কয়েক বছর ধরে বন্ধ থাকা একটি 'ভূতুড়ে' শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ায় শিক্ষকরা আনন্দিত হলেও বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক ও স্থানীয় মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাঝে মাঝে এর অফিস খোলা হলেও বিদ্যালয়ে আসে না কোনও শিক্ষার্থী। তারপরও কিভাবে এমপিওভুক্ত হয় এই স্কুলটি প্রশ্ন এলাকাবাসীর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০১ সালে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে কাগজে-কলমে স্থাপন দেখানো হয়। এমপিওভুক্ত আবেদনের সময় ২০২০ সালে সেখানে তৈরি করা হয় টিনের ঘর। ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক। নতুন ওই বিদ্যালয়ে তার বোন আতিকা বেগম ও ভগ্নিপতি আব্দুল মতিনকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষকের বড় ভাই মোখলেছুর রহমান।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে (৩১আগস্ট) পরিদর্শনকালে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণি কক্ষে ৪-৫ জন শিক্ষার্থী বসে লুডু খেলছে। তাদের দুই একজনের কাছে স্কুল ব্যাগ থাকলেও নেই খাতা কলম। শিক্ষার্থী শুন্য। বাকি দুটি শ্রেণীকক্ষ পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ। একটিতে মোটরসাইকেল ও অপরটিতে কাঠখড় রাখা হয়েছে। অফিস কক্ষে বসে আছেন চারজন সহকারী শিক্ষক। বিদ্যালয়ের জায়গায় ঠিকাদারি কাজের জন্য সিসি ব্লকের স্তুপ।
অভিযোগ রয়েছে, গত জুলাই মাসে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর থেকে গ্রামের ৫ থেকে ৭ জন শিক্ষার্থীদের বিনা পয়সায় প্রাইভেট পড়ানোর নামে শ্রেণি কার্যক্রম সচল দেখানো হচ্ছে। যদিও শিক্ষকরা দাবি করেছেন, এসব শিক্ষার্থী তাদের বিদ্যালয়ের। তখন শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে শিক্ষকরা তা দেখাতে পারেননি।
স্কুলের পাশের বাড়ির এক ব্যক্তি বলেন, এই স্কুলে অন্য প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ধার করে এনে ভর্তি দেখানো হয়েছে। তাদের দিয়েই ভর্তি ও পরীক্ষার্থী হিসেবে দেখানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারি শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান ঠিকাদারী কাজে ব্যস্ত থাকেন বলে বিদ্যালয়ে সময় দিতে পারেন না।
এমপিওভুক্ত হওয়ার শর্ত হলো প্রত্যেক শ্রেণিতে কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। আর পাবলিক পরীক্ষায় কমপক্ষে ২৫ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে একটি খেলার মাঠ থাকতে হবে। নিজস্ব জমি থাকতে হবে। কাগজে-কলমে জমি থাকলেও বাস্তবে এই বিদ্যালয়ের দখলে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি নেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীরা স্কুলে না আসলে শিক্ষকরা কি করবে। তবে স্কুলে না আসলেও পরীক্ষায় ঠিকই অংশগ্রহণ করে তারা। তবে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর জন্য অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করছি।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি মোখলেছুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আমার জানা নেই। আজকে পাঁচজন উপস্থিত হয়েছে বলে শুনেছি ।
তিনি বলেন, শুরুতে নয়-ছয় করে প্রতিষ্ঠান দাঁড় করায়নি এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে এমপিও যেহেতু হয়েছে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। শিক্ষকদের বলেছি স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ১৪ হাজার টাকা আছে । সেই টাকা দিয়ে টিন কিনে বারান্দা তৈরি করতে।
এ ব্যাপারে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনিয়ম হলে যারা এমপিও দিতে পারেন, তারা বাতিলও করতে পারেন বলে জানান তিনি।
এসআইএইচ