পয়োনিষ্কাশন-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে নাকাল কুড়িগ্রাম পৌরবাসী
সামান্য বৃষ্টিপাতেই নাকাল হতে হচ্ছে কুড়িগ্রাম পৌরবাসীকে। ভারী বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা এবং পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় পৌরবাসীকে। বছরের পর এমন ভোগান্তি পোহালেও বরাদ্দের অজুহাতে মিলছে না পরিত্রাণ। ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলে দুর্ভোগ যেন রীতিমতো রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে কর্তৃপক্ষের নিরব ভূমিকা মানুষের মাঝে বাড়ছে আক্ষেপ।
সরেজমিনে দেখা যায়, সামান্য বৃষ্টির পানিতে কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, সদর খাদ্য গোডাউন, পরীক্ষণ বিদ্যালয়, আরডিআরএস ও টেরেডেস হোমস, শিশু নিকেতনসহ বহু সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দুই থেকে আড়াই ফুটি পানির নিচে। এ ছাড়াও কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগের সড়কগুলোর মধ্যে আদর্শ পৌর বাজার, হাটিরপাড়, গাড়িয়াল পাড়া, পূর্ব হাসপাতাল (রৌমারী পাড়া), সূর্যের হাসি ক্লিনিক, এলজিইডি, উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ব পাশ, কলেজ মোড় হতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার কার্যালয় সড়ক, জেলা নির্বাচন অফিস, সড়ক ও জনপদ অফিসের সড়ক, খলিলগঞ্জ বাজার সংলগ্ন রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে যায়।
হাসপাতাল মোড় সড়কটিতে জমে থাকে হাটু পানি, নেমে যেতে সময় লাগে কয়েক ঘণ্টা। আর এসব এলাকার সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে রোগী, শিক্ষার্থী কিংবা অফিস আদালতে সেবা নিতে আসা মানুষজনকে পড়তে হয় নানা ধরনের দুর্ভোগে। পানির নিচে থাকা এসব এলাকার সড়কগুলো সংস্কার ও প্রশস্তকরণ না করায় খানাখন্দে ভরে গেছে। ফলে চলাচল অনুপযোগী এসব সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল, সাইকেল, রিকশা চলাচলে দুর্ঘটনা দৈনন্দিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে পৌরবাসী ও পথচারীদের।
এ ছাড়াও পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ও ডাস্টবিনের ব্যবস্থা না থাকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে পৌরবাসী। হাটিরপাড় এলাকার বাসিন্দা ইকবাল হাসান বলেন, ঠিকভাবে কর, ভ্যাট এগুলো দিয়েও ন্যূনতম সেবা আমরা পাই না। একটু বৃষ্টি হলেই পানিবন্দি হয় পড়তে হয় শতশত মানুষকে। এই এলাকায় কোনো ডাস্টবিন নেই। এতে এখানকার বাসিন্দা সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলে।
একই এলাকার আবু বক্কর বলেন, প্রায় ৭ বছর থেকে আওয়ামী লীগের মেয়র ক্ষমতায় আছে। তারা শুধু নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাদের আগে যারা মেয়র ছিল তাদের মতো কোনো উন্নয়নের কাজ হয়নি এই পৌরসভায়।
গ্রাম থেকে আসা রোগীর স্বজন বুলবুলি আকতার বলেন, হাসপাতাল যাওয়ার রাস্তা যে পরিমাণ খারাপ তা বলার মতো নয়। একটা রোগীকে বাইরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরীক্ষা করতে নিয়ে গেলে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে রাস্তার কারণে। এই রাস্তা দিয়ে কোনো গর্ভবতীকে অটো বা রিকশাতে আনলে রাস্তাতেই বাচ্চা প্রসব করে ফেলবে।
দক্ষিণ হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় মাসের পর মাস এই গ্রামের মানুষকে পানিবন্দি হয়ে থাকতে হয়। আর ডাস্টবিনের কোনো ব্যবস্থাই নেই। আমরা কী রকম কষ্টে আছি তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা শিল্পী বেগম বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের ময়লা আবর্জনার স্তুপ পানিতে ভাসে। দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানিতে ছোট বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করে এতে নানান ধরনের অসুখ হয়। বৃষ্টির পানিতে রাস্তা তলিয়ে থাকায় সন্তানের পোশাক ভিজে স্কুল যেতে বা আসতে হয়। এত চরম দুর্ভোগে পৌরবাসী থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। পৌর সভায় অনেক অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও আমরা নাগরিক সেবার ন্যূনতম সেবাটুকু পাচ্ছি না।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আলতাবুর রহমান বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই আমরা দুর্ভোগে পড়ি। বের হওয়ার মূল গেটটি থাকে এক হাঁটু পানির নিচে। লুঙ্গি ছাড়া ইউনিফর্ম পড়ে বের হওয়ার সুযোগ থাকে না। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের বর্ষাকালে এভাবে কষ্ট করে চলতে হয়।
পৌর মেয়র কাজিউল ইসলাম বলেন, সরকারি বরাদ্দ না থাকায় আমরা পানি নিষ্কাশনের জন্য কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিতে পারছি না। বরাদ্দ পেলেই দ্রুত জলাবদ্ধতা ও রাস্তার সমাধান হবে।
এসএন