খরায় আশীর্বাদ তিস্তা সেচের পানি, হাসছে আমন ক্ষেত
বর্ষা মৌসুমে তীব্র খরা হলেও রংপুরের তিস্তা সেচ প্রকল্পের খালগুলো পানিতে টইটুম্বুর। আর এই খালের পানিতে রংপুর, নীলফামারী ও দিনাজপুরের ৩৫টি উপজেলার আমন ক্ষেত সবুজে ছেয়ে গেছে। রংপুরসহ উত্তরের ১৬ জেলার ৪টি কৃষি জোনে প্রায় ২৫ লাখ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে কৃষি বিভাগ।
অসময়ের খরায় ভালো ফলনের আশায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে প্রায় ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা সেচ খালের মাধ্যমে ভূ-উপরিভাগের পানিতে হচ্ছে ফসলের চাষাবাদ। এই সেচ প্রকল্প থেকে সেচ সুবিধা ভোগ করছেন ১৫ লাখের বেশি কৃষক। চলতি মৌসুমে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ধান উৎপাদনের প্রত্যাশা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের। সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে হবে বড় অংকের অর্থের জ্বালানি সাশ্রয়। প্রকল্পের পানি ব্যবহারের ফলে বছরে একরপ্রতি কৃষকের সার্ভিস চার্জ মাত্র ৪৮০ টাকা। অথচ পাম্পে সেচ দিলে খরচ হতো ১০-১২ হাজার টাকা। খরাতেও সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানি পেয়ে খুশি চাষিরা।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা এলাকার কৃষক আজহার আলী বলেন, হামার এত্তি যখন পানির দরকার তখন পানি থাকে না। চাষাবাদ করতে খুব কষ্ট হয়। ওই তকনে হামরা তিস্তা সেচ ক্যানেলের পানি দিয়্যা আবাদ করি। এবার বৃষ্টি না হওয়ায় চিন্তাতে আছনো। তিস্তা সেচ খালের পানি ঠিকমতো পাওয়ায় তেমন সমস্যা হয় নাই। আশা করা যায় ভালো ফলন হইবে।
নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল চন্দ্র সরকার বলছেন, খরা মোকাবিলায় শুকনো মৌসুমে বোরো আর বর্ষায় আমন আবাদে দেওয়া হচ্ছে সম্পূরক সেচ। এতে ২ লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হবে বলেও আশা তার। তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় চলতি বছর নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম কামরুল হাসান বলেন, রংপুরে গত বছর মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ১ হাজার ৮৩০ মিলিমিটার। এ বছর বর্ষা মৌসুম শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আশানুরূপ বৃষ্টিপাত হয়নি। আবহাওয়ার এমন পরিবর্তন উত্তরের কৃষির জন্য অশনি সংকেত। স্বাভাবিক বৃষ্টি না হলে আমন চাষে তিন ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকরা। প্রথমত সেচে বাড়তি খরচ, দ্বিতীয়ত ক্ষেতে আগাছা, রোগ বালাই ও পোকার আক্রমণ বেড়ে যায় এবং তৃতীয়ত উৎপাদিত ধানে ভালো মানের চাল পাওয়া যাবে না।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক মাহাবুবুর রহমান বলেন, রংপুরসহ উত্তরের ১৬ জেলার চারটি কৃষি জোনে প্রায় ২৫ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু রংপুর অঞ্চলে (নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৫ হাজার হেক্টর। মধ্য আগস্ট পর্যন্ত আবাদের আওতায় ছিল ৫ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর। তিস্তা সেচ খালের পানি সুবিধা অব্যাহত থাকায় কৃষকরা অনেকটা চিন্তামুক্ত হয়েই চাষাবাদ করছেন।
এসজি