সার-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি: উৎপাদন খরচ নিয়ে শঙ্কায় নীলফামারীর কৃষকরা
সারের পর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে চিন্তায় পড়েছেন নীলফামারী জেলার কৃষকরা। সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলেও সেই তুলনায় ধানের দাম পাবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। কৃষকরা জানান, ডিজেল ও সারের দাম বাড়ার কারণে এবার উৎপাদন খরচ ব্যাপক হারে বাড়বে। সেই তুলনায় দাম না পেলে কৃষকরা ধান চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। অন্যদিকে কৃষিবিদরা জানান, যদি কৃষকের লাভ না হয় তাহলে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হবে। এর প্রভাব পড়বে কৃষি খাতেও। ইউরিয়া সার কেজিতে ৬ টাকা বেড়ে ২০ টাকা এবং ডিজেল ৮০ টাকা থেকে বেড়ে লিটারে ১১৪ টাকা করেছে সরকার। ফলে কৃষির সঙ্গে জড়িত এসব পণ্যের দাম বাড়ার কারণে ধানের ন্যায্য মূল্য পাবেন কি না সেই নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে কৃষকরা। তারপরও আমন আবাদে থেমে নেই তারা।
জেলার সোনারায় ইউনিয়নের ধান চাষী রশিদ জানান, লিটারে ৩৪ টাকা ও ইউরিয়া সার কেজি প্রতি ৬ টাকা বাড়ার কারণে আমরা দুশ্চচিন্তায় রয়েছি। চলতি আমন ধানটা অনেকটাই সেচের উপর নির্ভর করে। আর এই সেচ দিতে হয় শ্যালো মেশিনের দ্বারা। কিন্তু ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে এবার সেচের মূল্য অনেকটাই বেড়ে যাবে। এ ছাড়াও বিঘা প্রতি সার কিনতে বাড়তি টাকা গুনতে হবে। সেই তুলনায় ধানের উৎপাদন খরচ উঠবে কি না সেই চিন্তাই পেয়ে বসেছে আমাদের।
পাঙ্গা মটুকপুরের কৃষক শাহীন জানান, সারের মূল্যবৃদ্ধির পর ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে ধানের উৎপাদন খরচ তোলা সম্ভব হবে না। প্রতি বিঘায় এবার বাড়তি দুই হাজার টাকা ব্যয় বেশি হবে। সেই তুলনায় ধানের দাম হওয়া উচিত দেড় হাজার টাকা মন। ধানের উৎপাদন খরচ না উঠলে পরের বছর থেকে ধান আবাদ বাদ দিয়ে অন্য আবাদ করতে হতে পারে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে হালচাষ বিঘা প্রতি ৪৫০ টাকা করে নিচ্ছে ট্রাক্টর মালিকরা।
কৃষকরা জানান, সরকারতো শুধু ইউরিয়া সারের দাম বাড়িয়েছে। তবে বাজারে সব সারের দাম বেশি মূল্যে বিক্রি করছে দোকানীরা। কৃষকরা বাধ্য হয়ে বেশি দামেই সার কিনছে।
দোলপাড়ার কৃষক সংবাদ কর্মী আলমগীর হোসেন জানান, ডিজেলের দাম বাড়ার আগেই আমি জমিতে হালচাষ দেওয়ায় আগের দামেই জমি তৈরি করতে পারলেও অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে সার। তা ছাড়া জমিতে পানি না থাকলে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিতে হবে। ফলে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে ধানের আবাদ করা বাদই দিতে হবে।
এদিকে যারা আদী হিসেবে জমি আবাদ করছেন তাদের বেশিরভাগ জানিয়েছেন, তেল, সার, কিটনাশক ও মজুরির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরের বার থেকে আর আদী হিসেবে জমি চাষ করা সম্ভব না।
কৃষি নিয়ে কাজ করা কৃষিবিদ নাজমুল জানান, সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। সেই তুলনায় কৃষক যদি তার ফসলের দাম না পায় তবে তারা ধান আবাদের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, কৃষকরা যাতে ন্যায্য দামে সার কিনতে পারে সেজন্য আমাদের কৃষি বিভাগের টিম কাজ করে চলেছে। আগের মূল্যের সার যাতে কোনও ব্যবসায়ী বেশি দামে বিক্রি করতে না পারে সেজন্য আমাদের পক্ষ থেকে পুরো জেলায় অভিযান চলছে। তা ছাড়া দাম বাড়ার কারণে ধানের উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বাড়বে বলেও জানান তিনি।
এসআইএইচ