অর্জিত হয়নি পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা, সংকটে চাষীরা
রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় চলতি মওসুমে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে যেটুকু চাষাবাদ হয়েছে প্রয়োজনীয় পানির অভাবে সেসব পাট পঁচানোর ক্ষেত্রে সংকটে পড়েছে চাষীরা। রংপুর, গাইবন্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট নীলফামারী জেলায় চলতি মওসুমে ৫৮ হাজার ১২৪ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে এবারে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হয়ে পাট চাষ হয়েছে ৫১ হাজার ৬২৭ হেক্টর জমিতে। এ অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে আশানুরুপ বৃষ্টি না হবার কারনে খাল-বিলে পানি কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলে চলতি মৌসুমে ৫৮ হাজার ১২৪ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা র্নিধারন করা হয়েছে। এবারে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হয়ে পাট চাষ হয়েছে ৫১ হাজার ৬২৭ হেক্টর জমিতে।
এর মেধ্য রংপুরে ৯ হাজার ২৫৫ হেক্টরে, গাইবান্ধায় ১৫ হাজার হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১৬ হাজার ৫৭৭ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৪ হাজার ৮৫ হেক্টর এবং নীলফামরী জেলায় ৬ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতেদেশী, তোষা, মেস্তা এবং কেনাফ জাতের পট চাষ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্র আশা করছে, চাষ সফল হলে এসব পাট ক্ষেতে এবারে এবারে ৬ লাখ ২ হাজার বেল পাট উৎপন্ন হবে।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার চাষী আব্দুল আজিজ জানান, তার এক একর জমিতে পাটবীজ, সেচ, সার, কীটনাশক, শ্রমিক বাবদ ব্যয় হয়েছে সাড়ে ২৫ হাজার টাকা। পাট পঁচানোসহ সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে তাঁর ভাল লাভ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
গঙ্গাচড়া উপজেলার চাষী মিজানুর রহমান জানান, গতবছরের চেয়ে এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। চাষী তাজুল মিয়া জানান, এবার পাটের ক্ষেত দেখে মন ভরে গেছে। তবে পাট কাটার কথা কথা মনে হলেই পানির অভাবে পাট পঁচানোর বিষয় নিয়ে চোখে কান্না আসে ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় উপ-পরিচালক মাহবুব রহমান জানান, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থকরী এ ফসল চাষে কৃষকদের সব সময় উৎসাহ দেযা হচ্ছে। বাজারে পাটের দাম ভালো থাকায় চাষিরা পাট চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
রংপুরের আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রংপুর বিভাগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮০৪ মিলিমিটার। তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক শূন্য ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২১ সালে বৃষ্টি হয়েছিল ১৯৬ মিলিমিটার, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৪ এবং সর্বনিম্ন ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২০২২ সালের এপ্রিল মাস থেকে চলতি আগষ্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে ৮৫০ মিলিমিটার।
এর মধ্যে এপ্রিল মাসে ১৭৯ মিলিমিটার, মে মাসে ১৫৯ মিলিমিটার, জুন মাসে ১২৭ মিলিমিটার, জুলাই মাসে ২২৭ মিলিমিটার এবং আগষ্ট মাসে ১৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। এ সময়ে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৮ দশসিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ সময়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩২ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়ায় তা সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে। এমন প্রতিকুল আবহাওয়ায় রংপুর অঞ্চলের মাঠে, খাল-বিল, পুকুরে পাট পঁচানের মত প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পানির প্রচন্ড অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে পাট পঁচানের অনির্বায প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পানির সংকট জনিত দুশ্চিন্তায় চাষীদের সোণালী আঁশের অনাবিল স্বপ অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে।
এএজেড