আ. লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে বড় বৈষম্যের স্বীকার বগুড়া
ছবি: ঢাকাপ্রকাশ গ্রাফিক্স
বগুড়া, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উন্নত শহর। উত্তরের প্রবেশ মুখ খ্যাত ২,৯২০ বর্গকিলোমিটারের বগুড়া জেলায় রয়েছে খেরুয়া মসজিদ, রাণী ভবানীর বাপের বাড়ি, ভীমের জাঙ্গাল, পরশুরামের প্রাসাদ, মহাস্থানগড় সহ আরো বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান। যেগুলো বাংলার ইতিহাসকে ধারণ করে রেখেছে শত শত বছর ধরে। রয়েছে উত্তরবঙ্গের একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম।
বগুড়ায় জন্ম নিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা প্রফুল্ল চাকী, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার সহ অনেকে।
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে সারাদেশে নজিরবিহীন উন্নয়ন দেখিয়েছেন হাসিনা সরকার। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটও হয়েছে, সেটাও দৃশ্যমান।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করতে নির্মাণ হয়েছে পদ্মাসেতু, রাজধানী বাসির দৈনন্দিন জীবনে স্বস্তি ফেরাতে মেট্রোরেল কিংবা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, এক্সপ্রেস হাইওয়ে, দেশজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিনোদন কেন্দ্রসহ অনেক কিছুই। সেসব মানতেই হবে।
হাসিনা সরকারের এতসব উন্নয়নের মাঝেও ছিল নজিরবিহীন বৈষম্য। যার বড় উদহারণ উত্তরবঙ্গের প্রবেশমুখ বগুড়া জেলা। বিগত ১৫ বছর বগুড়াবাসী ছিল সবচেয়ে বৈষম্যের স্বীকার।
উত্তরবঙ্গের একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম ছিল বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম। আন্তর্জাতিক মানের ৫ তারকা ও চার তারকা হোটেল থাকার পরেও রাজনৈতিক কারণে এখানে খেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
উত্তর বঙ্গের রাজধানী খ্যাত বগুড়াকে বিভাগ কথা করার কথা থাকলেও সেটাও করা হয়নি। ৭২ বর্গ কিলোমিটারের সুবিশাল পৌরসভা বগুড়া। কথা ছিল সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা করার। সেটাও হয়নি।
দেড়শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এই জেলায় স্থাপন করা হয়নি কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে রয়েছে জিলা স্কুল, ভিএম, ক্যান্ট এর মতো বোর্ড সেরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এতো এতো ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান আর বিখ্যাত সব আঞ্চলিক খাবার রয়েছে এই জেলায়। সঠিক উদ্যোগ নিলে হয়ত দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিতি পেত বগুড়া।
উত্তরবঙ্গের ব্যাবসায়িক হাব বলা হয় এই জেলাকে। অথচ উত্তরবঙ্গের মানুষদের দীর্ঘ যাত্রায় সবচেয়ে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয় বগুড়ার যানজটে। বিশেষ করে দুই ঈদে।
বগুড়ায় যেমন রয়েছে এতসব ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান, তেমনি উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ কর্পোরেট অফিসের হেড কোয়ার্টারও রয়েছে এই জেলাতেই কিন্তু তারপরেও নেই কোনো এয়ারপোর্ট!
শুধু তাই নয় বৈষম্য রয়েছে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও। অনেকের এমনও অভিযোগ রয়েছে, বিসিএস এর ভাইভায় অনেকবার গিয়েও বাদ পড়তে হয়েছে, জন্মস্থান শুধুমাত্র বগুড়ায় হওয়ার কারণে।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, এসব বৈষম্যের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ যে রাজনৈতিক সেটা স্পষ্ট। তাদের মতে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়ায় হওয়ার কারণে এত বছর এই বৈষম্যের স্বীকার হতে হয়েছে বগুড়াবাসিকে।
১৫ বছরের সৈরাশ্বাসকে অতিষ্ঠ হয়ে গত ৫ আগস্ট ঢাকার রাস্তায় নামে ছাত্র-জনতার ঢল। ছাত্র-জনতার দেশকাঁপানো অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদ পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশী ভারতের কাছে। আপাতত সেখানেই রয়েছেন শেখ হাসিনা।