নির্বাচনে হেরে ইভিএমকে ‘ভুয়া’ বললেন আওয়ামী লীগ নেতা
বীর মুক্তিযোদ্ধা মেসবাউর রহমান রোজ। ছবি: সংগৃহীত
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় পরাজিত হয়ে ইভিএম (ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন) সিস্টেমকে ভুয়া বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মেসবাউর রহমান রোজ। জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি এই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য বিদায়ী মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেলের কাছে প্রায় ২৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৩ হাজার ১৯১ জন। এরমধ্যে ৩৪ হাজার ৮৭৩ জন ভোটার ভোট প্রদান করেন। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে গোলাম হাসনাইন রাসেল পান ৩১ হাজার ৫৫৯ ভোট। মেসবাউর রহমান পান ২ হাজার ৬৬৯ ভোট। অপরপ্রার্থী বাকী বিল্লাহ পান ৫৪১ ভোট। ৯৪টি ভোট নষ্ট হয়।
স্থানীয়রা জানায়, পরাজিত প্রার্থী মেসবাউর রহমান রোজ দীর্ঘদিন ধরে প্রবাস জীবন যাপন করে গত এক যুগ আগে দেশে আসেন। দেশে এসে তিনি একাকী জীবন যাপন করতে পছন্দ করতেন। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী কিংবা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি তার। এক পর্যায়ে গত বছর তিনি বড় ভাই ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম পাকনের প্রভাবে জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি হন।
এর আগে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মেসবাউর রহমান রোজ প্রার্থী হয়ে মাত্র ১২৩৬ ভোট পান। এরপরও তিনি এ বছরও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এদিকে ফলাফল ঘোষণার পর ‘রোজ মেছবাহুর রহমান’ নামে ফেসবুক আইডিতে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম মেসবাউর রহমান ফলাফল ঘোষণার ১ ঘণ্টা পর অর্থাৎ রাত পৌনে ৯টায় তিনি একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে পরাজিতের অভিজ্ঞতা থেকে আগামী ৩য় ও ৪র্থ ধাপের প্রার্থীদের প্রতি অনুরোধ, ইভিএম (ভুয়া) সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, পদ্ধতি ও ক্ষমতাশালীদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে অনুরোধ করছি।’
তার ফেসবুক থেকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পরপর রাজনৈতিক অঙ্গনসহ নানা শ্রেণি ও মহলে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। উঠে সমালোচনার ঝড়। আওয়ামী লীগ তথা সরকারি দলের একজন সক্রিয় পদধারী নেতা হিসেবে এমন সরকারের উদ্যোগে বিরোধিতা করায় দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এম মেসবাউর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে ইভিএম সিস্টেমটি ভুয়া মনে হয়েছে তাই বলেছি। এতে সরকারবিরোধী হলে করার কিছু নেই। চারটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখেছি নির্বাচনের সাথে যুক্তরা সরাসরি ভোটারকে গোপন কক্ষে নিয়ে গিয়ে ভোট নিয়ে নিচ্ছেন। তাই পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে প্রার্থীদের সতর্ক হতেই পোস্ট করেছি।’
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন বিদেশে থেকেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত। আওয়ামী লীগ চুরি করবে, অন্যায় করবে। এটা মেনে নিতে পারবো না।
এ বিষয়ে জানতে ভাঙ্গুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হাসনাইন রাসেল বলেন, ইভিএম পদ্ধতিটা অনেক সহজ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া। এখানে কারচুপি, অনিয়মের সুযোগ নেই। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে জনবিচ্ছিন্ন মানুষ হয়ে প্রতিটা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়াটা তার নেশায় পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের দলীয় নেতা হয়ে সরকার তথা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া বা কটুক্তি করাটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার।
রিটার্নিং অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শরিফ আহমেদ বলেন, আমরা কোন অভিযোগ পায়নি। কেউ অভিযোগ দিলে খতিয়ে দেখে কমিশনের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।