রাজশাহীতে জমে উঠছে ঈদের বেচাবিক্রি
পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি। মুসলমানদের ধর্মীয় এই উৎসবকে সামনে জমে উঠতে শুরু করেছে রাজশাহীর ঈদ বাজার। ক্রেতা আকর্ষণে চমকপ্রদ সব ছাড় ও র্যাফেল ড্র এর পুরস্কার ঘোষণা করেছে দোকান ও শো রুম মালিকসহ মার্কেট কর্তৃপক্ষ। তবে প্রত্যেকটি পণ্যের দাম এবার বাড়তি।
রবিবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর ও সোমবার (১০ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর নিউ মার্কেট, সাহেববাজার, আরডিএ মার্কেটসহ শো-রুমগুলো ঘুরে দেখা যায়, দিনে ক্রেতা-সমাগম কম থাকলেও সন্ধ্যার পরপরই ভিড় বাড়তে শুরু করছে। রাত সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কেনাবেচা চলছে। আরডিএ মার্কেট, জেবি শপিং মলসহ ব্যান্ডের শো-রুমগুলোতে ক্রেতা-সমাগম ভালোই ছিল।
এবার মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায়, কোনো কোনো দোকানে পা ফেলার ঠাঁই নেই। আবার কোনো কোনো দোকানে ক্রেতার সংখ্যা কম। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে ঈদ বাজার জমে উঠতে শুরু করেছে। যদিও পোশাকের দাম বিগত বছরের তুলনায় বেশি হওয়ায় অনেকেই এ দোকান, ওই দোকান ঘুরে ঘুরে পছন্দ ও সাধ্যের মধ্যে পোশাক কিনছেন।
সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার প্রত্যেকটা পোশাকের দাম বেশি। তারা কিনেছেনই বেশি দামে। যে কারণে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। আর এটাও সত্য মানুষের আর্থিক অবস্থা খুবই দুর্বল। এ কারণে অধিকাংশ মানুষই পছন্দ ও দামে কাটছাঁট করছেন।
রবিবার (৯ এপ্রিল) রাতে বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের পোশাক কিনতে এসেছিলেন ইয়াসিন আরাফাত। তিনি জানান, তিনি এখনো বেতন পাননি। তবে পোশাকের দাম বেড়ে যাবে, এমনটা ভেবেই আগে এসেছেন। কিন্তু দাম রমজানের প্রথম থেকেই বাড়িয়ে ফেলেছেন ব্যবসায়ীরা। রমজানের আগেও যেসব পাঞ্জাবি ১২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেগুলো এখন ১৬০০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। সামনে আরও দাম বাড়তে পারে, এমন শঙ্কা থেকে ১৭০০ টাকা দিয়ে একটি পাঞ্জাবি কিনেছেন।
আরেকজন ক্রেতা শাসমুল আরেফিন জানান, ব্যবসায়ীরা এতদিন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাত দিচ্ছিল। এখন আরও দুইটা অজুহাতযুক্ত করে যে দাম চাচ্ছেন তা অস্বাভাবিক। তারপরও কিছু করার নাই। নিজের জন্য না কিনলেও সন্তানদের জন্য কিনতে হচ্ছে। ছোট্ট কোলের বাচ্চাদেরও ৫০০ টাকার নিচে পছন্দসই কোনো পোশাক পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বেশি দামেই কিনতে হয়েছে।
এদিকে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে শো-রুমগুলোসহ অনেক দোকানেও ছাড়ের বিজ্ঞাপন সাঁটানো রয়েছে। যদিও এসব বিজ্ঞাপন নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এ ছাড়া ঈদকে সামনে রেখে থিম ওমর প্লাজা ও সাহেব বাজারের জেবি শপিং মলে পণ্য ক্রয়ের কুপনের ভিত্তিতে র্যাফেল ড্র এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সাহেববাজারের জেবি শপিং মলে কুপনের ভিত্তিতে র্যাফেল ড্র এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই আয়োজন করেছে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম। ফোরামের সভাপতি রেইনবো কালেকশনের স্বত্বাধিকারী মো. মামানূর রশিদ ওরফে সুমন জানান, এখনো তাদের শপিং মলে বেচাবিক্রি শুরু হলেও সেভাবে জমে উঠেনি। আর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেতন-বোনাস দেওয়া হলে এরপর পুরো দমে বেচাবিক্রি জমে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, ঈদকে সামনে রেখে এবার ক্রেতা আকর্ষণে ফোরামের পক্ষ থেকে একটি মোটরসাইকেল রাখা হয়েছে। ৫০০ টাকার ঊর্ধ্বে এই শপিং মলের যেকোনো দোকান থেকে পণ্য ক্রয় করলেই ক্রেতারা কুপন পাবেন। ঈদের আগের রাতে র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে।
এদিন নগরীর গণকপাড়া এলাকায় অবস্থিত ইজি ও লোটো দুটো ব্যান্ডের শো-রুমেই ভালো ভিড় দেখা যায়। ক্রেতাদের চাপে রিপোর্টারের সঙ্গে কথা বলারও সময় পাননি ব্যান্ডের ব্রাঞ্চ ম্যানেজাররা। তবে পরে মুঠোফোনে ইজি ব্যান্ডের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার শামসুজ্জামান রানা জানান, তাদের ব্যান্ডের পোশাকের দাম এবার বাড়েনি। তবে মানুষের আর্থিক অবস্থার এবার ভালো না। অন্যান্যবার অনেক আগেই বেচাবিক্রি জমে উঠে। এবার একটু দেরিতেই জমে উঠবে বলে মনে হচ্ছে।
এসজি