স্বাভাবিক জীবনে ফেরা জঙ্গিরা জানালেন, তারা জঙ্গি না!
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, আরএমপির বেলপুকুর থানার অভিযুক্ত ও জামিনপ্রাপ্ত ৩৩ জন জঙ্গি স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। তবে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানালো সন্ত্রাস দমন আইনে অভিযুক্ত এসব জঙ্গীরা। বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তারা বললেন, তারা নিতান্তই সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন সময় অন্যায়ভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আটকে রেখে নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারক্তি নিয়েছে। মিথ্যা জঙ্গি মামলা দিয়েছে। অথচ জঙ্গিদের তারা ঘৃণা করেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিকেলে আরএমপির বেলপুকুর থানায় অভিযুক্ত ও জামিনপ্রাপ্ত ৩৩ জন আসামি হাজিরা দিতে আসে। এসময় গণমাধ্যমকর্মীরা এসব জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার বিষয়টি জানতে চাইলেই তারা নিজেদেরকে জঙ্গি না দাবি করে তীব্র প্রতিবাদ জানান। তুলে ধরেন, তাদের প্রতি নানা অন্যায়ের চিত্র। এদেরই একজন হায়াতুল্লাহ। সে বেলপুকুর থানাধীন ভড়াপাড়ার বাসিন্দা।
তিনি বলেন, আমি রড মিস্ত্রির কাজ করি। আমাকে রাস্তার উপর থেকে ধরে নিয়ে এসেছিলো। আমি রাস্তায় যাচ্ছিলাম। কয়েকজন এসে বললো, 'চলো'। আমি বললাম কোথায় যাবে, তারা বললো, স্যার ডেকেছে। কিছু কথা আছে। আমি বললাম, কি কথা এখানেই বলেন। তারা বললো না, যেতে হবে। আমাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো। এক রাত আটকে রেখে নির্যাতন করা হলো।
ধরার সময়, আমার কাছে রড মিস্ত্রির কাজের উপকরণ সব নিয়ে নিয়েছে। পরে সামনে কিছু বই দিয়ে আমাকে মামলা দিয়েছে। বইয়ের মামলা দিয়েছে। আমার কি অপরাধ তাও বলেনি। র্যাব ধরেছিলো। এখন থানায় হাজিরা দিচ্ছি। আরেকজন পুঠিয়ার মাহিন্দ্রা এলাকার বাসিন্দা মিজান বলেন, তিনি ছিনতাই মামলায় ১০ মাস জেল খেটেছেন। পরে পুলিশ জিএমবি মামলা দেয়। এখন সেই মামলার হাজিরা দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করে আরেকজন গভীর নলকূপ মিস্ত্রি বলেন, আমাকে দিয়ে কাজ করে নিবে বলে ডেকেছিলো। একসঙ্গে বসে চা খেলাম। আমাকে বললো, দেখেন তো গাড়ি তে লোক আছে না কি? গাড়ির কাছে গেলাম। ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে তুলে নিলো। এরপর ৭ দিন আটকে রেখে নির্যাতন করা হলো। এরপর রাতে হলিদাগাছি এলাকায় ২ টা জিহাদি বই, ১ টা পিস্তল দিয়ে গ্রেপ্তার করলো। অথচ আমি জীবনে জিএমর কাজ করি নি। আমি মিস্ত্রি মানুষ। কাজ করেই সংসার চলে। এখনও এভাবেই চলছে।
আরেকজন ফার্মেসি ব্যববসায়ী বলেন, আমি আসরের নামাজ পরে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর আমাকে আটক করা হয়েছিলো। পরে গোয়েন্দা সংস্থার লোকই তদন্ত করে বলেছিলো, তোমাকে কেন আটক করে নিয়ে আসা হয়েছে। তোমার তো কোন জঙ্গি সম্পৃক্ততা পায় নি। আর আমি কোন দিনই জঙ্গি ছিলাম না। জঙ্গিকে ঘৃণা করি।
তারপরও ২০১৬ সালে আমার ফার্মেসির দোকান থেকে ডেকে এনে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছিলো। সেই মামলার জামিনেমুক্ত হয়ে এখনো হাজিরা দিচ্ছি। এভাবে সকলেই নিজেকে নিদোর্ষ দাবি করে গণমাধ্যমকর্মীদের বক্তব্য দেন। এছাড়া অন্য সাধারণ মামলার আসামিদেও জিএমবি মামলা দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ ওছে। যা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে বেলপুকুর থানা পুলিশও।
গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে বেলপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, আমি ২০২১ সালে নভেম্বরে জয়েন্ট করি। এরপর পূর্বে যেসকল জিএমবিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিলো, তাদের শণাক্ত করে কথা বলি। এখন প্রতি মাসে একবার করে হাজিরা দেয়। আর তারা (জঙ্গিরা) যে অভিযোগ করছে তা ঠিক না।
এ বিষয়ে রাজশাহী পুলিশ কমিশনার মো. আনিসুর রহমান বিপিএম (বার) পিপিএম (বার) বলেন, এটি আরএমপির প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম। থানায় নিয়মিত হাজিরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জামিনে মুক্ত জঙ্গি মামলার আসামিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকার করেছেন। আমরাও চাই জঙ্গি মামলার আসামিরা জঙ্গিবাদ হতে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক।
এদিকে, পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বেলপুকুর থানায় মোট ৩৮ জন তালিকাভুক্ত জঙ্গি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ জন নিয়মিত থানায় হাজিরা দিচ্ছে ও ১ জন জেল হাজতে রয়েছে। থানায় হাজিরা দেওয়া ৩৩ জনের মধ্যে ৩ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাইকোর্টের আদেশে জামিনে মুক্ত রয়েছে। বাকি ৩০ জনের মধ্যে ২৯ জন বিচারাধীন আদালত থেকে জামিনে মুক্ত আছে এবং ১ জনকে মামলা তদন্তকালে অব্যাহতি পেয়েছে। এছাড়া ৪ জন জঙ্গির তথ্য সংগ্রহ সংক্রান্ত গৃহীত কার্যক্রম চলমান আছে।
এএজেড