ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলায় লটারির নামে জুয়া

বগুড়ার শাজাহানপুর বি-ব্লক মাঠে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলায় প্রবেশ টিকিটের মূল্যে ছয় দিন ধরে চলছে লটারির নামে জুয়া। মেলার শুরু থেকেই উপজেলা ও জেলা প্রশাসন লটারি র্যাফেল ড্র-কে অবৈধ ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত তা রহস্যজনক কারণে বন্ধ হয়নি।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি শাজাহানপুর উপজেলার বি-ব্লক মাঠে মেলার উদ্বোধন করা হয়। মেলার আয়োজক বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহম্মেদ মিঠু।
জানা যায়, মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত প্রবেশে কোনো বাধা নেই। টিকিট ছাড়াই দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করছেন। অথচ মেলার গেটে কাউন্টারে প্রবেশ টিকিটের নামে বিক্রি করা হচ্ছে ২০ টাকা মূল্যে লটারির টিকিট। শুধু মেলার গেটে নয় জেলার আনাচে-কানাচে শত শত গাড়িতে আকর্ষণীয় পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে মাইকিং করে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন রাত ৯টায় লটারির র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এই র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠান স্থানীয় ক্যাবল অপারেটরের মাধ্যমে টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করে সাধারণ মানুষ ও কমলমতি শিশুদের জুয়ায় আসক্ত হতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হলেও ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হয়েছে লটারি র্যাফেল ড্র। প্রতিদিন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল, স্বর্ণালংকার, টিভি, ফ্রিজসহ লোভনীয় পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ফলে আকর্ষণীয় পুরস্কারের লোভে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার হাজার মানুষ হুমড়ি খেয়ে লটারির টিকিট ক্রয় করছেন। এমন কী ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরাও টিফিনের টাকায় টিকিট ক্রয় করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। লটারির নামে জুয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবগত করা হলেও বন্ধ হচ্ছে না লটারির নামে জুয়া।
সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদা পারভীন বলেন, এ উপজেলায় মেলার লটারির টিকিট বিক্রি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরও যদি কেউ টিকিট বিক্রি করে, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা আফরোজ বলেন, লটারির টিকিট বিক্রির বিষয়টি জানতাম না এখন জানলাম। এ উপজেলায় লটারির টিকিট বিক্রি বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম সম্পা বলেন, এ উপজেলায় মেলার লটারির টিকিট বিক্রি নিষেধ করা হয়েছে। এরপরও যদি কেউ টিকিট বিক্রি করে, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দুপচাচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুমন জিহাদী বলেন, এ উপজেলায় লটারির টিকিট বিক্রির বিষয়টি আমার জানাছিল না টিকিট বিক্রি বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদা খানম বলেন, মেলা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিয়েছে। তবে মেলায় লটারির অনুমতি দেওয়া হয়নি। উপজেলা প্রশাসন থেকে লটারি বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও যে এলাকাটিতে মেলা চলছে, ওই জায়গাটাও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষের। তবে লটারির বিষয়টি জানার পর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডকে জানানো হয়েছে। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ লটারি বাদ দিয়ে মেলার অনুমোদন দিয়েছে।
বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোতাহার হোসেন বলেন, লটারির বিষয়টি আমার জানা নেই, তার পরেও বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজেস্ট্রেট মোছা. আফসানা ইয়াসমিন বলেন, আমরা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষকে লটারি র্যাফেল ড্র বন্ধে চিঠি দিয়েছি তার পরেও যদি তারা লটারি বন্ধ না করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসএন
