কোথায় হচ্ছে নওগাঁ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়?
২০১৮ সালে নওগাঁর এক জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ৪ বছর পর ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নওগাঁয় বঙ্গবন্ধুর নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসরা অনুমোদন প্রদান করে মন্ত্রিসভা। গতকাল মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ বিলটি জাতীয় সংসদে পাস হবার পর এই বিশ্ববিদ্যালয়টি নওগাঁর কোথায় স্থাপিত হতে যাচ্ছে এ নিয়ে কৌতূহল ও আলোচনা চলছে জেলার সর্বত্র। নিজ নিজ এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চলছে জোরদার।
নওগাঁ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এখনও কোনো স্থান নির্বাচন করা হয়নি। তবে সম্ভাব্য তিন-চারটি স্থানের যে কোনো একটিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নওগাঁ নওজোয়ান মাঠে নির্বাচনী জনসভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন। ওই জনসভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নওগাঁ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মালেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে নওগাঁয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। ওই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নওগাঁয় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য পতিত অথবা এক ফসলি জমি পাওয়া যাবে এমন স্থান নির্বাচনের নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ বিল পাশ হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে এখন স্থান নির্বাচন, জমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন হবে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থান নির্বাচন নিয়ে আলোচনা আছে সর্বত্র। যে কয়েকটি স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের দাবি উঠেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া বাজার সংলগ্ন ছাতড়ার বিল। এছাড়া রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে মহাদেবপুর উপজেলার নওহাটা মোড়, নওগাঁর সদর উপজেলার দিঘলীর বিল ও বদলগাছী উপজেলার ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন বিল।
নওগাঁ জেলা শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে ছাতড়ার বিলে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের স্বপক্ষে স্থানীয় বাসিন্দা ও চন্দননগর কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান সরকার এখন কৃষি জমিও নষ্ট করার পক্ষে নয়। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য এক ফসলী কিংবা পতিত জমি নির্বাচন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ছাতড়ার বিলই হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উপযুক্ত স্থান। কারণ, ছাতড়া বাজার সংলগ্ন ছাতড়া বিলের অধিকাংশ জমিই এক ফসলী। এছাড়া নিয়ামতপুর উপজেলার এই অঞ্চলটি উন্নয়নের দিক থেকে অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রেয়েছে। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হলে এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন হবে। এতে করে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার গ্রাম হবে শহর- এই অঙ্গীকারও বাস্তবায়ন হবে।
অপরদিকে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে মহাদেবপুর উপজেলার নওহাটা কিংবা নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের ব্যাপারে সরব হয়েছেন অনেকেই। নওহাটা ও বলিহারে বঙ্গবন্ধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য একাধিকবার মানববন্ধনও করেছে এলাকাবাসী।
বলিহার কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু নাসের বলেন, নওহাটা মোড় ও বলিহার এই দুই এলাকা নওগাঁয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সবচেয়ে যৌক্তিক স্থান। স্থান দুটি মহাসড়কের পাশে। নওগাঁ শহর থেকে এই দুই স্থানের দূরত্ব ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার। আর সান্তাহর রেল স্টেশন থেকে এই দুই স্থানের দূরত্ব ১৭ থেকে ১৯ কিলোমিটার। বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনেরা সড়ক ও রেলপথ সুবিধা আবার শহরের সুবিধাও পাবে। আবার নওহাটা চৌমাশিয়া বাজারের কাছে প্রায় ৩০০ একর খাসজমি রয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকারের খরচ অনেকটাই কম যাবে।
২০১৩ সাল থেকে নওগাঁয় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবিতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে 'মুভমেন্ট ফর ডেভলপমেন্ট অব নওগাঁ' নামের একটি সংগঠন। নওগাঁয় একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মুভমেন্ট ফর ডেভলপমেন্ট নওগাঁর প্রধান সমন্বয়কারী ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শফিকুর রহমান মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি অবশ্যই একটি যৌক্তিক স্থানে স্থাপন করতে হবে।
শহরের খুব কাছাকাছি নয়, আবার শহর থেকে খুব দূরে নয় এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সকল অংশীজনেরা যাতে সড়ক ও রেলপথের সুবিধা পায় জায়গা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। আশা করি, যাঁরা দ্বায়িত্বে থাকবেন তাঁরা নওগাঁর সুধী সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যৌক্তিক স্থান নির্বাচন করবেন।
এ প্রসঙ্গে নওগাঁ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচনের ব্যাপারে কোন নির্দেশনা আসেনি জানিয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান জানান, নওগাঁরবাসীর সার্বিক উন্নয়ন এবং শিক্ষা ও গবেষণার উপযোগী পরিবেশ দেখে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থান নির্বাচন করা হবে।
এএজেড