হোটেল ব্যবসার আড়ালে আপত্তিকর ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইল
রাজশাহীতে আবাসিক হোটেল ব্যবসার আড়ালে দেহ ব্যবসার চিত্র মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমের খবরের শিরোনাম হয়। তবে এবার হোটেল রুমে গোপন ক্যামেরায় আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী দম্পত্তির অভিযোগ খতিয়ে দেখে ঘটনার সত্যতা মেলায় ‘পপুলার-২’ নামের হোটেল ব্যবস্থাপক ও ওয়ার্ড বয়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরপর এ ঘটনায় হোটেল মালিকসহ ৫ জনকে আসামি করে পর্ণগ্রাফি আইনে মামলা করে ভুক্তভোগী দম্পত্তি। কিন্তু ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ব্ল্যাকমেইলিং চক্রের মূল হোতা ওই প্রতিষ্ঠানের তিন মালিক।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় গত ৩১ জানুয়ারি ‘পপুলার-২’ নামের হোটেল ব্যবস্থাপক ও নওগাঁর পোরশা উপজেলার শরীফুল ইসলাম (২৮) এবং ওয়ার্ড বয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আবদুল নূর (১৯) কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অথচ ঘটনার বেশ কিছু দিন পেরিয়ে গেলেও অদৃশ্য শক্তির ছোঁয়ায় হোটেল মালিক রফিকুল ইসলাম, শাহিনুল হক ও আসাদুজ্জামান ভূঁইয়াকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি তারা। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী দম্পত্তি।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, রাজশাহী নগরীর লক্ষীপুর এলাকায় অবস্থিত এই আবাসিক হোটেলে ওই শিক্ষার্থীর বাইরেও অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জনের আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ওই আসামিরা। তবে শেষ পর্যন্ত ২টি ভিডিওর উপস্থিতি ফোনে পায় পুলিশ।
ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার (২৯ জানুয়ারি) রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের এক ছাত্র তার স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য গ্রাম থেকে রাজশাহীতে আসেন। রাজশাহীতে আসার পর হোটেল পপুলার-২ এ উঠেন তারা। হোটেলে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর তাদের মুঠোফোনে কল করে বাইরে আসতে বলা হয়। তারা বাইরে না এলে হোটেলের দরজায় ধাক্কাধাক্কি করতে থাকেন হোটেলের ব্যবস্থাপক ও তার সহযোগীরা। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থী ও তার স্ত্রী দরজা খুলে দিলে তাদের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে ৫০ হাজার টাকা হলে এই ভিডিও ডিলিট করে দিবে বলে জানায়। অর্থ না দিলে গোপনে ধারণ করা ভিডিও ইন্টানেটে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন তারা।
এ সময় ওই শিক্ষার্থী ও তার স্ত্রী জোর করে হোটেল থেকে চলে আসেন। পরে তারা রাজশাহী স্টেশনে রাত কাটান। পরের দিন সকালে স্ত্রীকে বাড়ির উদ্দেশে ট্রেনে তুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান তিনি। এরপর দুপুর থেকে ওই শিক্ষার্থীকে হোটেলের কর্মচারীরা ফোন দিতে থাকেন। তাদের কাছে অনেক ভিডিও রয়েছে দাবি করে দেখা করতে বলেন।
ওই শিক্ষার্থী বিষয়টি তার বিভাগের এক বড় ভাইকে জানান। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতাসহ রাজশাহীর এক টেলিভিশন সাংবাদিকে জানালে তারা হোটেল মালিকদের একজনকে বিষয়টি জানান। মিমাংসার জন্য ভুক্তভোগী যুবককে ডাকেন তিন হোটেল মালিক। এরপর রাজপাড়া থানা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাসহ ভুক্তভোগী যুবককে নিয়ে হোটেলের পাশের একটি বেসরকারি স্কুলে বিষয়টির মিমাংসার জন্য বসে হোটেল মালিকরা। সেখানে ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে সবার সামনে নিজের অপরাধ স্বীকার করে ভিডিও ধারণকারী যুবক। এক পর্যায়ে ওই যুবক সবার সামনে হোটেলের তিন মালিককে এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে শণাক্ত করেন এবং ৩০-৪০ জনের ভিডিও ধারণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় ভিডিও ধারণকৃত মুঠোফোন থেকে ওই শিক্ষার্থী দম্পত্তির ভিডিওটি হোটেল মালিকরা মুছে দেয় বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার হাসান কবীর জানান, এমন কোনো হোটেলের নামই তিনি শোনেননি। আর ওই হোটেল নিবন্ধিত কি-না? এটা প্রশাসন দেখবে। তবে তাদের সংগঠনে যেন তেন কোনো হোটেল মালিকদের রাখেন না।
এ ব্যাপারে রাজপাড়া থানার ওসি এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান জানান, এ ঘটনায় হোটেল মালিকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ব্যবস্থাপক ও আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা মুঠোফোনে মামলার আলামত হিসেবে গোপনে ধারণ করা ভিডিও পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা গোপনে ভিডিও করার বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। এ কারণে তাদের রিমান্ড চাওয়া হয় নি। আর বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে এই তিনজনের নামে কোনো মামলা ছিলো কি না? এমন প্রশ্নে ওসি জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে জানাতে পারবেন।
এসআইএইচ