নবেসুমিতে আখ সরবরাহ না করায় চিনি উৎপাদন বন্ধ
নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল এলাকায় মাঠে এখনও রয়েছে আখ। কিন্তু দাম কম পাওয়ার অজুহাতে তা মিলে সরবরাহ করছে না কৃষক। এতে বাধ্য হয়েই চলতি মৌসুমে চিনি উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মিলের কার্যক্রম বন্ধ হওয়া অসম্ভব নয় মনে করছেন মিল কর্তৃপক্ষ। আর তা হলে ওই শিল্প ধ্বংসের পাশাপাশি বেকার হবে হাজারের অধিক শ্রমিক-কর্মচারী। বিপদে পড়বেন আখচাষী। এমন অবস্থা নিরসনে ক্রাশার মালিকদের পণ্যমূল্যে ভ্যাট, ট্যাক্স আরোপের তাগিদ দিয়েছেন শ্রমিক-কর্মচারী নেতারা।
মিলসূত্রে জানা যায়, নবেসুমি এলাকায় চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার ১০০ একর জমিতে দুই লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে চিনি উৎপাদনের জন্য ওই আখ মাড়াই শুরু হয় গত ২৫ নভেম্বর।চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার নির্ধারণ করা হয় ৯ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। আর চিনি আহরণের হার ধরা হয় শতকরা ৭ ভাগ।
কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকেই মিলে আখ সরবরাহ কমতে শুরু করে। মিলকর্তৃপক্ষ মিল এলাকার ১৪০০০ আখ চাষীদের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করে আখ সরবরাহের আহবান জানান। কিন্তু আখচাঢীরা জানান, মিলগেটে আখের মূল্য দেওয়া হচ্ছে ১৮০ টাকা মণ। অথচ মিল এলাকায় ৪০৯ টি ক্রাশার মালিক তাদেরকে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা মণ আখের মূল্য দিচ্ছে। এমন অবস্থায় তারা মিলে আখ সরবরাহ করতে অপারগতা প্রকাশ করায় ৫২ কর্মদিবসে (১৫ জানুয়ারি ) এই মিলে আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
ওই সময় পর্যন্ত আখ মাড়াই করা হয়েছে প্রায় ৮১ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন। এতে চিনি উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় চার হাজার ২০০ মেট্রিক টন। চিনি আহরণের হার ছিল শতকরা ৫ দশমিক ৩৪ ভাগ। অথচ এখনও পর্যন্ত মিল এলাকায় প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাঠে রয়েছে। নবেসুমির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল আজম বলেন, চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত আখ উৎপাদনে চাষিদের সার-বীজ দিয়ে সহায়তা করা হয়। কিন্তু তারা আখ সরবরাহ না করায় কষ্ট নিয়ে মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, নবেসুমিতে ১১৬৬ জন শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় হয়তো মিল বন্ধ হয়ে যাবে। তখন একদিকে যেমন এখানকার আখ চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন, অপরদিকে বেকার হয়ে পড়বে ওই শ্রমিক কর্মচারীরা। এমন অবস্থায় মিল চালু রাখা, পর্যাপ্ত চিনি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের আশু পদক্ষেপ ও সুচিন্তা কামনা করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নবেসুমি শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জানান, মিলে উৎপাদিত পণ্যের ওপর ১৫ ভাগ ভ্যাট ছাড়াও আয়কর আরোপ করা আছে। অথচ ওই ক্রাশার মালিকদের উৎপাদিত গুড়ের মূল্যে কোন ভ্যাট বা আয়কর নির্ধারণ নেই।
ফলে তাদের উৎপাদন খরচ কম হওয়ায়, তারা বেশি, দামে আখ কিনতে পারেন। আবার বেশি, দাম দেয়ায় তারা ভালো আখ বেছে বেছে কেনেন। অপরদিকে কৃষকদের খারাপ আখ গুলো মিলে দেয়ায় চিনি উৎপাদনের হার কম হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, চিনি আহরণের হার এবারে প্রায় ৫ ভাগ হওয়ায় অবশিষ্ট প্রায় ৯৫ ভাগ চিটাগুড়। অথচ ক্রাশারে ওই শতভাগই গুড় তৈরী হয়। ফলে ক্রাশার মালিকরা লাভবান হচ্ছেন আর বন্ধের উপক্রম নবেসুমি।
তিনি দাবী করেন, যদি ওই ক্রাশারে উৎপাদিত পণ্যমূল্যে ১৫ ভাগ ভ্যাট আর ৩ ভাগ আয়কর দেয়া হয় তবে ক্রাশার মালিকরা চড়া,দামে আখ কিনতে পারবেনা। আগামী মৌসুমে আখের সরকারী মূল্য ২২০-২৫০ টাকা মণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দাবী করে
তিনি বলেন, যদি সরকার ওই ক্রাশার মালিকদের উৎপাদিত পণ্যমূল্যে ১৫ ভাগ ভ্যাট আর ৩ ভাগ আয়কর নির্ধারণ ও কার্যকর করেন তবে, আগামী মৌসুমে মিলে আর আখের সংকট হবেনা। তাতে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার পাশাপাশি মিল বন্ধের সম্ভাবনা থাকবে না। এব্যাপারে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আশু পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এএজেড