নওগাঁয় শয্যার চেয়ে বেড়েছে শিশু রোগী ভর্তির সংখ্যা
নওগাঁয় শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে ঠান্ডাজনিত নিউমোনিয়া, ব্রটিওলাইটিস, অ্যাজমা, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৪৮ জন। আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ।
আজ শনিবার (১৪ জানুয়ারি) নওগাঁ সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, শয্যা সংখ্যা ১২টি হলেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ৮৫ জন শিশু। শয্যা সংকটের কারণে একই শয্যায় দুই-তিনজন করে শিশু রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেকে শয্যা না পেয়ে ওয়ার্ডের মেঝে এবং হাসপাতালের বারান্দায় মেঝেতে শিশুকে রেখে চিকিৎসা করাচ্ছেন।
নওগাঁ সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সাত দিনে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬৮ জন শিশু। আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই ৭ দিনে ভর্তি হয়েছে ১৭৫ জন শিশু। অর্থাৎ প্রতিদিন ৩৪ জনের বেশি শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসাপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
সদর উপজেলার হাপানিয়া এলাকার বাসিন্দা শেফালী আক্তার। গত দুই দিন ধরে হাসপাতালের মেঝেতে শয্যা নিয়ে সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়ে জেসমিনকে নিউমোনিয়া চিকিৎসা করাচ্ছেন তিনি। শেফালী বলেন, ‘কোনো সিট খালি নাই। হাসপাতালে প্রতিদিন এত অসুস্থ বাচ্চা আসছে, ভাবা যায় না। শ্বাসকষ্টের শিশু রোগী বেশি হওয়ার কারণে অক্সিজেন দেওয়ার জন্য লাইন ধরে থাকতে হচ্ছে।’
দেড় বছরের শিশু সন্তান সাদিয়াকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার বিলাশবাড়ী গ্রামর মৌসুমী খাতুন। সিট খালি না পেয়ে শিশু ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝেতে শয্যা নিয়ে সন্তানের চিকিৎসা করাচ্ছেন তিনি। তার সঙ্গে কথা হলে মৌসুমী খাতুন বলেন, ‘তিন-চার দিন ধরে বাবুর ঠান্ডা লাগছে। সর্দির চোটে গতকাল থেকে বুকের দুধও খেতে পারছে না। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার বললেন-আমার মেয়ের নিউমোনিয়া হয়েছে। মেয়েকে সুস্থ করার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করছি।’
এ প্রসঙ্গে শিশু ওয়ার্ডের জ্যেষ্ঠ নার্স রোজিনা আক্তার বলেন, ‘অন্যান্য সময়ে শিশু ওয়ার্ডে ৩০ থেকে ৪০টি করে শিশু ভর্তি থাকে। সেখানে গত ১৫-২০ দিন ধরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ জন শিশু ভর্তি থাকছে। ফলে চিকিৎসকদের পাশাপাশি এত রোগীর চাপ সামলাতে আমাদের নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে নওগাঁ সদর হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ রতন কুমার সিংহ বলেন, শীতের সময়টাতে শিশুদের মধ্যে ব্রধিওলাইটিস, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি দেখা যায়। সাধারণত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী ভর্তি থাকে। কিন্তু জানুয়ারিতে মাঝামাঝি সময় থেকে সেই সংখ্যা বিষণ্ন হয়ে যায়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে ঠান্ডাজনিত রোগ হলেই বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এই সময়টাতে শিশুদের গরম পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো অব্যাহত রাখতে হবে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। মায়েদেরও ঠান্ডা লাগানো যাবে না।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন আবু হেনা মো. রায়হানুজ্জামান বলেন, 'এক সপ্তাহে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৫০০’র অধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। রোগীর এই সংখ্যাকে ঠিক অস্বাভাবিক না বললেও অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি বলা যায়। তবে এটা এখনো প্রার্দুভাব পর্যায়ে যায়নি। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ ও রোগীদের জন্য কম্বল রয়েছে।’
এদিকে নওগাঁর বদলগাছি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম ১৩ দিনে নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কখনো ১০ ডিগ্রির উপরে যায়নি। গতকাল সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বৃহস্পতিবার নওগাঁয় এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি।
এসআইএইচ