এক টাকার ভিজিটে চিকিৎসা, প্রশংসায় ডা. সুমাইয়া
এক টাকা ভিজিটে চিকিৎসা! এটা বর্তমান সময়ে অবিশ্বাস্য। কল্পনাহীনও বটে। তবে রাজশাহীতে বাবার ইচ্ছা পূরণে নামমাত্র প্রতীকি ভিজিটে সাধারণ রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন সদ্য এমবিবিএস পাস করা ডাক্তার সুমাইয়া বিনতে মোজ্জাম্মেল। আর এই ব্যতিক্রমি মানবিক উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে।
রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার মনিচত্বর এলাকায় নিজ বাসার নিচে একটি ফার্মেসিতে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন ডা. সুমাইয়া বিনতে মোজ্জাম্মেল। তার ইচ্ছে সামনে বিসিএস কমপ্লিট করে চাকুরির পাশাপাশি আজীবন একটি নির্দিষ্ট বিনামূল্যে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়া। তিনি প্রতি শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নিয়মিত রোগী দেখছেন। তবে এসময়ের পাশাপাশি নিজের অবসর সময়ও সাধারণ রোগীদের দিচ্ছেন তিনি।
এ বিষয়ে সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল জানান, আমার ডাক্তার হওয়ার কোন ইচ্ছেই ছিলো না। আমি ব্যবসা করে উদ্যোক্তা হতে চাইতাম। কিন্তু বাবা চাইতেন ডাক্তারি পেশায় আত্মনিয়োগ করে মানুষের সেবা করি। বাবার ইচ্ছেতেই এইচএসসি শেষ করে ইসলামি ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। ২০২২ সালের নভেম্বরে ইন্টার্নি শেষ করে বাবার ইচ্ছেতেই বাসার নিচে ফার্মেসি চালু করে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেছি।
ডা. সুমাইয়া জানান, ১ টাকা মূলত একটা প্রতীকি সংখ্যা মাত্র। তিনি বিনামূল্যেই চিকিৎসা দিচ্ছেন। এই একটাকা মূলত তার একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের জন্য নিচ্ছেন। যেই সংগঠন করোনাকালের বিভিষীকাময় সময়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িয়েছিলো। এখনো বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রম চলমান।
তিনি জানান, তিনি ওই সামাজিক সেচ্ছাসেবী সংগঠনের ফাইন্ডার হিসেবে আছেন। ওই সংগঠনটাকে এগিয়ে নিতে ১ টাকা করে রোগীদের থেকে নিচ্ছেন। তবে কেউ কেউ ১০-২০ বা ইচ্ছে মতো দিচ্ছেন। আর তিনি পাঁচ দিন আগে থেকে রোগী দেখা শুরু করেছেন। লিফলেট বানানো হয়েছে। এখনও সেইভাবে বিলি করা হয় নি। তবে এরমধ্যেই ইতিবাচক সাড়া মিলেছে।
ডাক্তার সুমাইয়া বিনতে মোজ্জাম্মেল নগরীর মনিচত্বর এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তার বাবা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মীর মোজাম্মেল আলী (৫৬)। ডা. সুমাইয়া বাবা-মায়ের ছোট মেয়ে। তারা তিনি বোন ও চার ভাই। তিন বোনই পেশায় ডাক্তার। যারা বেসরকারি ক্লিনিকে কর্মরত আছেন। ডা. সুমাইয়ার স্বামীও ডাক্তার। তিনিও নগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে কর্মরত আছেন।
ডাক্তার সুমাইয়া বিনতে মোজ্জামেল জানান, তার ডাক্তার হয়ে ওঠার গল্পটা অনেকটা কষ্টের ছিলো। তার বিয়ের এখন প্রায় ৮ বছর অতিবাহিত হয়েছে। প্রথমবর্ষেই তার বিয়ে হয়ে যায়। তিনি এখন দুই সন্তানের মা। দ্বিতীয় বর্ষে থাকতেই প্রথম সন্তানের মা হন। এরপর এমবিবিএস ফাইনাল পরিক্ষার কয়েকমাস আগে আরেক সন্তান প্রসব করেন। সবকিছু সামলিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা কঠিন ছিলো। তবে জীবন নিয়ে তিনি খুবই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখেন। জীবন কঠিন পার করেছেন বলেই আজ ডাক্তার হয়েছেন। মানুষের জন্য কিছু করতে পারছেন।
আব্দুস সালাম নামের এক রোগী বলেন, নিঃসন্দেহে এটি অকল্পনীয় উদ্যোগ। ডাক্তারি পেশা নিয়ে এখন সাধারণ মানুষ ইতিবাচক ধারণা পোষণ করতে পারছে না। আর বাংলাদেশে অনেক সময় কসাই হিসেবেই বলা হয়ে থাকে। এমন মানবিক ডাক্তার যে এখনো আছে, এটা দেশের জন্য; সমাজের জন্য সুখকর।
সুমাইয়ার বাবা রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মীর মোজাম্মেল আলী বলেন, ইচ্ছে ছিল আমার চার ছেলে-মেয়েকেই ডাক্তার বানাবো। তবে আল্লাহর হাজার শুকরিয়া তিন মেয়ে ডাক্তার হয়েছে। তিন মেয়েকেই এমন উদ্যোগের জন্য বলেছি। কিন্তু অন্য দুই জন রাজি হয় নি। এই ছোট মেয়েরা বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে রাজি হয়েছে। তবে আমি আশাবাদি আমার তিন মেয়েই দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় সাধারণ মানুষের সেবায় দিবে।
রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার বলেন, মীর মোজাম্মেল আলী আমার সাবেক কলিগ। তার পরিবারের সঙ্গে আমার সখ্যতা আছে। আমার মেয়েও ডাক্তার। তবে মীর মোজ্জামেলের মেয়ের উদ্যোগটা অবশ্যই প্রশংসার। তার এমন উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানায়। তার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সানাউল হক মিয়া জানান, এটা অবশ্যই মহৎ উদ্যোগ। এমন উদ্যোগ ডাক্তারি পেশার প্রতি মানুষের আস্থার জায়গা মজবুত করে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। আমাদের উচিত তাকে অনুপ্রেরণা যোগানো।
এএজেড