নওগাঁয় আউশ ধানের দামে অসন্তুষ্ট চাষিরা
আউশ ধানকে বলা হয় আপদকালীন ফসল। তাই সোনালি এ ফসল ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর চাষিরা। ধানের ফলনে খুশি হলেও দামে সন্তুষ্ট না চাষিরা। বাজারে ধানের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে নিম্নমুখী হওয়ায় সন্তুষ্ট না তারা।
সরেজমিনে বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, আগাম জাতের এই আউশ ধান কাটা ও মাড়াই চলছে পুরোদমে। কৃষকরা ধান কেটে আঁটি বেঁধে কেউ মাথায় করে, আবার কেউ পরিবহনে করে বাড়িতে ও রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছেন। রাস্তায় ও বাড়ির উঠানেই চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ।
চাষিরা বলছেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ধানের রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ কম ছিল। গত বছরের চেয়ে এবার আউশের ভালো ফলন হয়েছে। বিঘাপ্রতি ১৬ থেকে ২০ মণ করে ফলন পাচ্ছেন তারা। তবে বাজারে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা ধানের মণ হওয়ায় অসন্তুষ্ট চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ৫৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ করেছে চাষিরা। এর মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৬৯৫ হেক্টর, রানীনগরে ১ হাজার ১৫০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ১ হাজার ৭২০ হেক্টর, বদলগাছীতে ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ১৩ হাজার ১১০ হেক্টর, পতœীতলায় ৬ হাজার ৮৫০ হেক্টর, ধামইরহাটে ২ হাজার ২৮০ হেক্টর এবং মান্দা উপজেলায় ১৪ হাজার ৩১০ হেক্টর , সাপাহার উপজেলায় ৭৯৫ হেক্টর, পোরশায় ৯১০ হেক্টর এবং নিয়ামতপুরে ৯ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে।
যা থেকে ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪১০ মেট্রিক টন। সেখানে চালের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন।
মহাদেবপুর উপজেলা সরস্বতী পুর গ্রামের চাষি মকবুল হোসেন বলেন, এবার আমি ৪ বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে ধান রোপণ থেকে শুরু করে কাটা পর্যন্ত ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু বাজারে ধানের যে দাম তাতে করে আমাদের আমাদের সংসার চালানো কষ্টকর। মণ প্রতি ধানের দাম না হলেও ১ হাজার টাকার বেশি হলে আমরা (কৃষকরা) তাও একটু লাভবান হতাম।
আরেক চাষি সবুজ বলেন, সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে পারিজা জাতের ধান লাগিয়েছি। এক সপ্তাহ আগে ধানের দাম ভালো ছিল। প্রতি মন ধান ১ হাজার টাকার বেশি ছিল। বর্তমানে বাজারে সে ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মন। এতে করে আমাদের খুব একটা পোষায় না। সবকিছু খরচ বাদ দিয়ে সমান-সমান হয়।
উত্তর গ্রামের চাষি হেলাল বলেন, এবছর খরা এবং আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এছাড়াও পোকামাকড় কম ছিল। আমি দেড় বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। বিঘা প্রতি ১৮ মণ করে ধান পেয়েছি।
শ্যামপুর গ্রামের চাষি সুমন হোসেন বলেন, আমি ৫ বিঘা জমিতে ধান লাগাইছিলাম। এক বিঘা জমিতে হাল চাষ থেকে শুরু করে কীটনাশক ও কাটা-মাড়াই পর্যন্ত প্রায় আট হাজার টাকা খরচ হয়েছে আমার। ১৬ থেকে ২০ মন হারে প্রতি বিঘাতে ধানের ফলন হয়েছে। ধান চাষে একজন কৃষকের যে পরিশ্রম করতে হয় বর্তমান বাজার সে হিসাবে ধানের দাম খুব কম। বাজারে ধানের দাম হাজার টাকার বেশি হলে আমাদের জন্য ভালো হতো।
চাষি ওসমান গনি বলেন, প্রথম অবস্থায় ধানের দাম ভালো ছিল। শ্রমিক না পেয়ে সামনের সপ্তাহে ধান কাটতে পারি নাই। এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমে দিয়েছে। এতে করে আমরা বিপাকে পড়েছি। সরকারের এদিকে নজর দেওয়ার কথা জানান।
মহাদেবপুর উপজেলার হাটচকগৌরি এলাকার ধান ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, প্রথমে যখন ধান কাটা শুরু হয় তখন আবহাওয়া ও ধানের সরবরাহ কম ছিল। বর্তমানে পুরো দমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এবং আবহাওয়া খারাপ। ব্রি-৫৬ ও পারিজা জাতের ধান যেগুলো কাচা সেটা মণ প্রতি ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা কিনছি। এবং শুকনো যে গুলো সেগুলো ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা করে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার এ,কে,এম মনজুরে মাওলা বলেন, আউশ ধান চাষের জন্য জেলায় কৃষককে বিভিন্ন ধরনের প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে। সঠিক সময়ে ধান রোপন, পোকামাকড় কম ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর আউশ ধানের ভালো ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪৩ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। ধান কাটার সময় তেমন কোন বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষক ভাগান্তিতে পড়ে নাই। এই ধান কাটার পর সুগন্ধি আমন ধান লাগানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে ধানের ভালো দাম ছিল। এখন বাজারে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে। এতে করে লাভের পরিমাণ কম হলেও কৃষকের লস হবে না। মণ প্রতি ১ হাজার টাকা করে দাম হলে কৃষকরা বেশি লাভবান হবেন বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। ধান মাড়াইয়ের পর তাৎক্ষণিক বিক্রি না করে সংরক্ষণ করে পরে বিক্রি করলে আরও ভালো দাম পাওয়ার কথা জানান তিনি।
এএজেড