যে জাদুর কাঠিতে দেশসেরা রাজশাহী কলেজ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ র্যাঙ্কিং ২০১৮ এর ফলাফলে আবারও দেশসেরা নির্বাচিত হয়েছে রাজশাহী কলেজ। ২০১৫ সাল থেকে টানা চতুর্থবারের মতো দেশসেরা হবার গৌরব অর্জন করেছে শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপিঠ। এই সফলতাকে সামনে রেখে বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) মিষ্টি বিতরণ ও র্যালির মধ্য দিয়ে আনন্দ উদযাপন করা হয়েছে। ধারাবাহিক এই সফলতায় সর্বত্রই রাজশাহী কলেজের প্রশংসা ছড়িয়েছে। অনেকেই এই সফলতার পেছনের রহস্য খুঁজছেন।
ঢাকা প্রকাশকে সেই সফলতার রহস্য উন্মোচন করেছেন, ধারাবাহিক সাফল্যের মূল কারিগর হিসেবে পরিচিত রাজশাহী কলেজের প্রাক্তণ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মহা. হবিবুর রহমান। তিনি আধুনিক রাজশাহী কলেজের রূপকার হিসেবেও পরিচিত। ২০১৪ সালের আগস্টে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বদলে যেতে থাকে রাজশাহী কলেজের শিক্ষা পরিবেশ। শিক্ষার্থীদের প্রণোদিত করতে ব্যক্তিক্রমি নানা উদ্যোগে প্রশংসিত তিনি। তিনি ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর এই সময়ের মধ্যেই টানা চার বারের শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব অর্জন করে রাজশাহী কলেজ।
রাজশাহী কলেজের প্রাক্তণ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহা. হবিবুর রহমান বলেন, ২২ হাজার শিক্ষার্থীকে অকাতরে সময় দিয়েছে। ২৪ ঘন্টা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভেবেছি। খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম ছেড়ে শিক্ষার্থীদের সময় দিয়েছি। আমি অধ্যক্ষ হিসেবে যখন ক্লাস নিচ্ছি, অধ্যক্ষ হিসেবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছি, অধ্যক্ষ হিসেবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছি, তখন কিন্তু অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারীরা বসে থাকতে পারে না। এটি ছিলো আমার এক নম্বর মন্ত্র।
তিনি বলেন, আরেকটি মন্ত্র হলো- 'শিক্ষার্থীরা নিজেরা কথা বলতে শিখবে, অনুষ্ঠান করতে শিখবে, স্বাবলম্বী হবে' এই জন্য ৫০ টা সহ-শিক্ষা সংগঠন তৈরি করেছিলাম। এই সংগঠনের ছায়া তলে হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা আসছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আগে যে স্টেজে কথা বলতে ভয় পেতাম, ইংরেজিতে কথা বলতে ভয় পেতাম তা এখন আর পাই না। শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারতাম না, তা এখন পারছি। শিক্ষার্থীদের এই প্লাট ফরমা তৈরি করে দিয়েছে। তারা নিজেরাই ইতিবাচকভাবে বদলে যেতে শিখেছে।
অধ্যাপক মহা. হবিবুর রহমান বলেন, বর্তমান অধ্যক্ষ এই কলেজেরই উপাধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি সুচারুভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আর রাজশাহী কলেজের সুমহান অধ্যক্ষ ও পন্ডিত যারা ছিলেন, তারা যে স্থান সৃষ্টি করে দিয়ে গেছেন বা যে মান-মর্যাদা সৃষ্টি করে গেছেন, তা কোন অধ্যক্ষের দ্বারা সম্ভব হবে না রষাতলে নিয়ে যাওয়ার। বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল খালেক তিনিও নিরবিচ্ছিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তার নেতৃত্বে রাজশাহী কলেজ উত্তোরত্তোর সমৃদ্ধি অর্জণ করবে।
রাজশাহী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, রাজশাহী কলেজের ধারাবাহিক সাফল্যের পেছনে প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. হবিবুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বের বড় ভূমিকা রয়েছে। রাজশাহী কলেজকে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব করতে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সর্ম্পককে সুদৃঢ় করেছেন। শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। পুরো ক্যাস্পাসকে শিক্ষার্থীবান্ধব করে সাজিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খলাবোধ জাগ্রত করেছেন। শিক্ষকদের আন্তরিকভাবে পাঠদানে উৎসাহিত করেছেন। আর এসব কারণেই রাজশাহী কলেজ শ্রেষ্ঠ ও মডেল বিদ্যাপিঠ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। এই শিক্ষকের শূণ্যতাও পরতে পরতে অনুভব করেন শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহা. আব্দুল খালেক বলেন, রাজশাহী কলেজ সব সময় শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা ভাবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সর্ম্পক ও মেধার উৎকর্ষতা সাধনে কলেজ প্রশাসন সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে। আজকের এই সাফল্যের পেছনে সাবেক অধ্যক্ষের বড় একটি ভূমিকা রয়েছে। সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সাফল্যের মাত্রাকে আরও উচ্চস্তরে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে কাজ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আধুনিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমসহ অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করা হচ্ছে। রাজশাহী কলেজের এই সাফল্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক ও সহশিক্ষা সংগঠনের নেতৃত্ব, শুভাকাঙ্খী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ইতিবাচক প্রচেষ্টা রয়েছে। ভবিষ্যতেও এই প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন থাকবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ র্যাঙ্কিং ২০১৮ এর ফলাফলে ২০১৫ সাল থেকে টানা চতুর্থবারের মতো দেশসেরা হবার গৌরব অর্জনে মিষ্টি বিতরণ ও র্যালির মধ্য দিয়ে আনন্দ উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে রাজশাহী কলেজের আয়োজনে বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১০ টায় আনন্দ র্যালির আয়োজন করা হয়। রাজশাহী কলেজের রজনীকান্ত সেন মঞ্চ থেকে শুরু হয়ে আনন্দ র্যালিটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রশাসন ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। শেষে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
আনন্দ র্যালিতে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহা. আব্দুল খালেক, প্রাক্তণ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মহা. হবিবুর রহমান, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ওলিউর রহমান, কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, শিক্ষক পরিষদের সাবেক সম্পাদক ড.পিযুষ কান্তি ফৌজদারসহ সকল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষকমন্ডলী ও শিক্ষার্থীরা।
এএজেড
