সার-তেলের মূল্যবৃদ্ধি
'ধান চাষ ছেড়ে ঝোলা নিয়ে পথে নামতে হবে'
'কষ্ট বাবা! গরিব মানুষদের ধান চাষ করাটা খুব কষ্টের। তেল, সারের দাম বেশি। কৃষিকাজ করে এখন কোনো লাভ নেই বাবা। বৃষ্টি নাই, পানি কিনে ধান চাষ করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তার উপর সার, তেলের দাম যেভাবে বাড়ছে এভাবে চলতে থাকলে ধান চাষ ছেড়ে ঝোলা নিয়ে পথে নামতে হবে।'
নওগাঁ সদর উপজেলার তিলেকপুর ইউনিয়নের তাজনগর গ্রামের কৃষক আব্দুস কুদ্দুসের মতো এরকম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার হাজারো কৃষক।
চলতি আমন মৌসুমে নওগাঁয় দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধান উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা এ জেলার কৃষকদের এখন দুর্ভাবনায় দিন-রাত কাটছে। কারণ রোপা আমনের ভরা মৌসুমে কয়েকদিনের ব্যবধানে ইউরিয়া ও ডিজেলের দাম বাড়ার ফলে ব্যয় মেটাতে নাজেহাল অবস্থা কৃষকদের।
কৃষকরা বলছেন, চলতি আমন মৌসুমে সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যয় উঠবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বেশি সমস্যায় বর্গাচাষি ও ক্ষুদ্র কৃষকরা। তাদের মতে, সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদনে বাড়তি ৫-৬ হাজার টাকা খরচ পড়বে। প্রতি বিঘা জমিতে ১২-১৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ফসল উৎপাদন করে ন্যায্যমূল্য না পেলে বড় ধরনের সংকটে পড়তে হবে তাদের।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ) নওগাঁ জেলা শাখা সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রায় ৬৬ হাজার পরিবার কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। জেলায় বিসিআইসি ও বিএডিসি অনুমোদিত সার ডিলার রয়েছেন ৩৩৩ জন। চলতি মাসে জেলায় ইউরিয়া সারের বরাদ্দ ৯ হাজার ২৯৩ মেট্রিক টন, টিএসপি ৮৯৭ টন, ডিএপি ২ হাজার ৫৪৩ টন ও এমওপি সারের বরাদ্দ ১ হাজার ৭৯৬ টন।
কেজিপ্রতি ৬ টাকা মূল্যবৃদ্ধির ফলে কেবল ইউরিয়া সার ব্যবহারের কারণে ১৫০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হবে। এ ছাড়া ডিজেলের দাম বাড়ার ফলে বাড়তি চাষ ও সেচ খরচ যোগ হবে।
সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের কৃষক দুলাল ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, তেলের দাম বেশি। আগে ১৬ টাকা কেজিতে যে সার ছিল এখন তা ২৬ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। তাহলে কীভাবে চাষাবাদ করব? চাষাবাদ করে খরচের টাকা উঠে না। আগে এক বিঘা জমি চাষাবাদ করতে ৬-৮ হাজার টাকা লাগত এখন ১২-১৩ হাজার টাকা খরচ পড়ছে। কৃষক মানুষ চাষাবাদ করেই খেতে হবে। তাই ধার দেনা করে চাষাবাদ করছি।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক এ কে এম মঞ্জুরে মওলা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ হেক্টর, বেশ কিছুদিন যাবত তীব্র খড়া ও পানি সংকট। বৃষ্টি নেই বললেই চলে। মাঝে কয়েকদিন বৃষ্টি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অগ্রগতি ৭১ শতাংশ। বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে রোপণের গতি অনেকটাই কম। বৃষ্টি স্বাভাবিক থাকলে হয়তো আমরা চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারতাম। আমরা এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আশাবাদী। আমাদের যেসব ডিপ ও শ্যালো টিউবওয়েল চালু রয়েছে এসব নিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। আশা করি আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব।
তিনি কৃষকদের উদ্দ্যেশে বলেন, এ মুহূর্তে কৃষকদের জন্য পরামর্শ যারা দেরিতে ধান রোপণ করেছেন তারা চারার সংখ্যা অধিক দিবেন। প্রতি গোছায় ৭-৮টি চারা এবং খুব ঘন করে যতটুকু সম্ভব চারা রোপণ করবেন।
তিনি আরও বলেন, এমওপি সার পরিবহনের বিষয়ের সমস্যা আছে। যা দু-একদিনের মধ্যেই কেটে যাবে বলে আশা করছি। চলতি মাস ও গত মাস মিলিয়ে প্রায় ২৬০০ টন সার পাইনি। যা সান্তাহার গোডাউনে সংরক্ষিত আছে। আমরা বিএডিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি, আগামী দু-একদিনের মধ্যেই সান্তাহার গোডাউন থেকে আমাদের সরবরাহকৃত এমওপি সার সরবরাহ করা হবে।
এসজি/