কুড়িগ্রামে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুন মাষকলাইয়ের সম্ভাবনা
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে নদ-নদী অববাহিকার বিস্তৃর্ণ ধূসর বালুচরে। কৃষকের বিস্তৃত মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। যেন চারদিকে সবুজ রঙ ঢেলে দেওয়া হয়েছে। সবুজ ঢেকে দিয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত চকচকে বালুকাময় এলাকা। সে রঙের নয়ন জুড়ানো দৃশ্যে সেজেছে ফসলের মাঠ।
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে প্রকৃতির রূপ-বৈচিত্র্য। এখানে ডালপালা মেলে কৃষকের মনে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুন জমিতে চাষ হওয়া মাষকলাই ক্ষেত।
নাগেশ্বরী কৃষি অফিস জানায়, এ বছর ১শ ২০ হেক্টর জমিতে মাষকলাই চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। চাষ হয়েছে ২শ ৭৫ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুন। অথচ কয়েক বছর আগেও পরিত্যক্ত ছিল উপজেলার দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র নদ ও গঙ্গাধর নদী অববাহিকার চরাঞ্চলীয় এসব জমি। প্রতিবছর বন্যায় পলি জমে কিছুটা আবাদযোগ্য হওয়ায় সম্পূরক সেচে এখানে শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ। ফলাফল আশানুরূপ হওয়ায় ধীরে ধীরে বাড়ছে চাষাবাদ। ধারাবাহিকতায় এবারে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১শ ৫৫ হেক্টর বেশি জমিতে মাষকলাইয়ের চাষ হয়েছে।
যে কারণে উপজেলার কেদার, বল্লভেরখাষ, কচাকাটা, নারায়ণপুর, কালিগঞ্জ, নুনখাওয়া, বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চল ভরে গেছে মাষকলাইয়ের সবুজ পাতায়। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ অংশে শীষ এসেছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন প্রান্তিক চাষিরা।
কচাকাটার চর শৌলমারী এলাকার কৃষক আব্দুল মালেক জানান, বন্যায় নষ্ট হওয়া চরাঞ্চলের সাড়ে চার বিঘা জমিতে মাষকলাই চাষ করেছেন তিনি। বীজ, হালচাষ, সার সবমিলিয়ে প্রতি বিঘায় তার খরচ হয়েছে ১৩শ টাকা। কাটা, মাড়াইসহ ফসল ঘরে উঠতে তার আরও ১৫শ থেকে ১৮শ টাকা খরচ হবে। অনুকূল আবহাওয়ায় ফলন ভালো হলে বিঘা প্রতি তিনি ৫ থেকে ৬ মণ ফসল পাবেন। উৎপাদিত এ ফসল তিনি মণপ্রতি ১৬শ থেকে ১৮শ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করলে আমনের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে তার বিশ্বাস।
একই এলাকার কৃষক ফরিদুল আলম জানান, কম খরচে বেশি লাভ পাওয়া যায় বলে তার মতো এলাকার অনেকে মাষকলাই চাষ করছেন। বিশেষ করে পতিত জমিতে নামমাত্র হালচাষে এর বীজ রোপন করেছেন তিনি।
কালিগঞ্জ ইউনিয়নের কুমেদপুর গ্রামের কৃষক আল মামুন জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নিচু চরাঞ্চলে আর কোন ফসল চাষের সময় থাকে না। তাই বিভিন্ন প্রকার ডাল জাতীয় ফসল চাষাবাদ করা হয়। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে মাষকলাই, মসুর, খেসারী, মুগ, শুলটি ও মটর। এবার উপজেলায় মাষকলাইয়ের পাশাপাশি মসুর ১শ ৯৫ হেক্টর, খেসারি ১শ ৫০ হেক্টর, মুগ ১শ ৩৫ হেক্টর, শুল্টি ১০ হেক্টর এবং মটর ৬ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নাগেশ্বরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘এ বছর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ডাল চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রান্তিক চাষিরা মাষকলাইয়ের চাষাবাদ দ্বিগুন করেছে। কৃষি অফিস থেকে চাষিদের বীজসহ বিভিন্ন ধরনেরর সহায়তা করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এখন পর্যন্ত ফলন ভালোই দেখা যাচ্ছে। মৌসুম শেষে আশানুরূপ ফলন পেতে পারেন প্রান্তিক চাষিরা।’
/এএন