হাতির পিঠে গেলেন বর
জন্মের সময় মাকে হারান রতন প্রামাণিক। এরপর থেকে তাকে সন্তানের স্নেহে কোলেপিঠে মানুষ করেন সম্পর্কে আত্মীয় রব্বেল প্রামাণিক-কমেলা খাতুন দম্পতি। নবজাতকের নাম রাখার সময় তারা ঘোষণা দিয়েছিলেন ছেলে বড় হলে তাকে হাতির পিঠে চড়িয়ে বিয়ে করাতে নিয়ে যাবেন এবং হাতির পিঠে চড়িয়ে পুত্রবধূকে বাড়িতে নিয়ে আসবেন। ২৫ বছর পর কথা রেখেছেন প্রামাণিক-কমেলা খাতুন দম্পতি। তারা তাদের পালিত সন্তানকে হাতির পিঠে চড়িয়ে বিয়ে করিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার পৌর এলাকার কোহিত মহল্লায় জাকজমকভাবে এ বিয়ের আয়োজন করা হয়। বর রতন প্রামাণিক ইরাকপ্রবাসী।
শুধু তাই নয়, বিয়েতে নিয়ে গেছেন আড়াই হাজার সহযাত্রী। বিয়েতে সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুরসহ গণমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্র জানায়, উপজেলার কোহিত মহল্লার বাসিন্দা তাড়াশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক মেম্বার মো. রব্বেল প্রামাণিকের এলাকায় বেশ সুপরিচিতি আছে। প্রায় ২৫ বছর আগে তার বড় ভাই মো. একদিল প্রামাণিকের স্ত্রী সন্তান প্রসব করতে গিয়ে নবজাতক রেখে মারা যান। এসময় রব্বেল প্রামাণিক ও তার স্ত্রী কমেলা খাতুন মা হারা নবজাতককে বাড়িতে নিয়ে আসেন। ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে তার নাম রাখেন মো. রতন প্রমাণিক। পাশাপাশি পাড়া-প্রতিবেশীদের সামনে ঘোষণা দেন ছেলে বড় হলে তাকে হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করাতে নিয়ে যাবেন এবং হাতির পিঠে চড়িয়ে নতুন বউমাকে বাড়িতে নিয়ে আসবেন।
এরপর থেকে ওই বাড়িতেই বড় হতে থাকেন রতন প্রামাণিক। পরবর্তী সময়ে রতন জীবিকার তাগিদে ইরাকে পাড়ি জমান। দীর্ঘদিন প্রবাসী হিসেবে কাজ করে সম্প্রতি দেশে ফিরে আসেন। বৃহস্পতিবার তাকে ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পাত্রী একই উপজেলার মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের দিঘিসগুনা গ্রামের রইচ উদ্দিনের মেয়ে জোসনা খাতুন (২০)।
বাবা রব্বেল প্রামাণিক ২৫ বছর আগের দেওয়া ঘোষণা রাখতে ও শখ মেটাতে ছেলের বিয়েতে হাতি আনতে মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) বগুড়া যান। পরে সেখান থেকে দ্য লায়ন বুলবুল সার্কাসের একটি হাতি দুইদিনে ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন। হাতির পিঠে চড়ে বর বিয়ে করতে যাবেন- এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিয়েবাড়িতে পাড়া-প্রতিবেশীসহ আশপাশের এলাকার লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে।
বৃহস্পতিবার সেই কাঙ্ক্ষিত বিয়ের দিনটি এলে সকালে ভাড়া করা হাতিকে গোসল করানো হয় ও সাজানো হয়। হাতির শরীরে বর ও কনের নাম লিখে দেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সহযাত্রীরা বরকে হাতির পিঠে চড়িয়ে নিয়ে যান কনের বাড়িতে। এসময় বর ও কনের বাড়ি এলাকার চার পাঁচটি গ্রামের শিশু-কিশোরসহ সব বয়সি লোকজন ভিড় জমান।
হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করতে আসা বর মো. রতন প্রামাণিক বলেন, ‘বাবা-মার শখ পূরণ করতে হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করতে এসেছি।’
বরের সহযাত্রীরা জানান, এ অঞ্চলে হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে করার ঘটনাটি বিরল। তাই বিষয়টি তারা উপভোগ করেছেন।
এসএন