বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জে আন্দোলনকারীদের বাসে হামলা, আহত অন্তত ৩০ জন
ছবি: সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে ঢাকায় যাওয়ার পথে বাগেরহাটের মোল্লাহাট ও গোপালগঞ্জের প্রবেশমুখে শিক্ষার্থীদের বহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুই স্থানে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে খুলনা থেকে শিক্ষার্থীদের বহনকারী প্রায় ২৫টি বাসের বহর ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার মাদ্রাসাঘাট এলাকায় বহরের একটি বাস কিছুটা পেছনে পড়ে যায়। সাইড দেওয়ার মতো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বাসে হামলা চালানো হয়।
স্থানীয় হামলাকারীরা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বাস থেকে নামিয়ে মারধর করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হামলাকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়, যা প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন।
মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, "পরিস্থিতি এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে। শিক্ষার্থীরা তাদের গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন। ফের সংঘর্ষ এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।"
বাগেরহাটের ঘটনার পর দুপুরে গোপালগঞ্জের প্রবেশমুখে শিক্ষার্থীদের বহরে ফের হামলার অভিযোগ ওঠে। আন্দোলনকারীদের দাবি, স্থানীয় সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় আরও ১০ জন আহত হয়েছেন।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, হামলার পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হাত রয়েছে। তাদের দাবি, শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানো ও থামিয়ে দেওয়ার জন্যই এই হামলা চালানো হয়েছে।
হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলার কারণে খুলনা-মাওয়া মহাসড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে দুপুর সোয়া ১টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, হামলা আগে থেকেই পরিকল্পিত ছিল। খুলনা থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক জহুরুল তানভীর বলেন, "আমাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসররা এ কাজ করেছে। আমরা আহত হয়েছি, কিন্তু আমাদের লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে যাব না।"
আরেক সমন্বয়ক মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ বলেন, "এই হামলা আমাদের দমাতে পারবে না। যারা হামলা করেছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। নইলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের খুঁজে বের করবে।"
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, যা দেশের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত। মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ কর্মসূচি শুরু হয়।
কর্মসূচিতে যোগ দিতে ভোর থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষার্থীরা ঢাকায় জড়ো হতে শুরু করেন। তবে পথিমধ্যে সংঘর্ষ কর্মসূচির পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তোলে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন বলেন, "আমাদের ওপর হামলা হয়েছে, কিন্তু আমরা থামব না। আমাদের লক্ষ্য বৈষম্যহীন একটি দেশ গড়া। কোনো বাধাই আমাদের এই পথে পিছিয়ে দিতে পারবে না।"
ঘটনার পর মোল্লাহাট ও গোপালগঞ্জের প্রবেশমুখে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা হামলার সুষ্ঠু বিচার এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক ও উত্তেজনা আরও বেড়েছে।