শিক্ষার্থীর প্রতি নির্দয় আচরণের অভিযোগ এক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে
নাটোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীর প্রতি নির্দয় আচরণ করার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। অধ্যক্ষের নাম মৌসুমী পারভীন। কলেজের ফি বাকি থাকায় তিনি এক শিক্ষার্থীকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেননি।
ঘটনার শিকার ওই শিক্ষার্থীর নাম জরিপ আলী। তিনি নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়নের বাঙ্গাবাড়ি গ্রামের মৃত সামসুদ্দিন মন্ডলের ছেলে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জরিপ আলী কখনও দিনমজুরি আবার কখনও রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করে সংসার চালান। সংসার চালানোর ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে তিনি কলেজের ফি পরিশোধ করতে পারেননি। যে কারণে তাকে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি।
নাটোর মহিলা কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে পরীক্ষার দিন প্রবেশপত্র না পাওয়ায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী জরিপ আলী কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকতে পারছিলেন না। পরে জেলা প্রশাসক মো. শামীম আহমেদ এর হস্তক্ষেপে একা পরীক্ষায় অংশ নেন জরিপ আলী।
সূত্র অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় নাটোর মহিলা কলেজ কেন্দ্রে প্রথম পরীক্ষা (হিসাব বিজ্ঞান) শুরু হয়। পরীক্ষা কক্ষে ঢুকতে না পেরে জরিপ আলী দিশাহীনভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। কলেজের একজন স্টাফ তাকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন তিনি এভাবে ঘোরাফেরা করছেন? জরিপ আলী তাকে তার সমস্যার কথা খুলে বলেন। এরপর স্থানীয় সাংবাদিকদের ঘটনাটি জানান ওই স্টাফ। সাংবাদিকরা জানান জেলা প্রশাসককে।
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক কেন্দ্রে এসে কলেজ কর্তৃপক্ষকে ডেকে বকেয়া টাকা নিজে পরিশোধ করে দেন এবং জরিপ আলীকে পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করে দেন।
জরিপ আলীর মা শরিফ বেওয়া বলেন, ‘২০১৮ সালে তার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে নাবালক শিশু জরিপের উপার্জনেই সংসার চালাতে হয় তাদের। দারিদ্র্যের কারণে জরিপ কখনও দিনমজুর আবার কখনও রাজমিস্ত্রীর হেলপার হিসাবে কাজ করে সংসার চালান। অভাবের কারণে কলেজের টাকা দিতে পারেননি। তাই কলেজ থেকে প্রবেশপত্র দেয়নি। তাদের অসহযোগিতায় আমার ছেলের জীবনটা ধ্বংস হতে বসেছিল।’
জরিপ আলী জানান, সংসার চালাতে গিয়ে তিনি কলেজের সেশন ফিসহ পরীক্ষার ফি-এর পুরো টাকা দিতে পারেননি। গত শনিবার তিনি কলেজে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রবেশপত্র চায়লে কলেজের করণিক সামুদ এবং শিশির টাকা বকেয়া থাকায় প্রবেশপত্র দিতে অপারগতা জানান।
কেন্দ্রসচিব রেজাউল করিম জানান, চন্দ্রকলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজের
এইচএসসি পরীক্ষার্থী জরিপ আলীর পরীক্ষা দিতে না পারার বিষয়টি জানতে পেরে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ তাৎক্ষণিক ওই কেন্দ্রে যান। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় বিশেষ ব্যবস্থায় জরিপ আলীর পরীক্ষা নেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, জরিপ আলীর সময় মতো একটি সুবিধাবঞ্চিত, গরিব শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারার খবর শুনে তাৎক্ষণিক পরীক্ষা কেন্দ্রে ছুটে যান। তিনি ব্যক্তিগতভাবে জরিপ আলীর কলেজের পাওনা টাকা পরিশোধ করে তার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। টাকার জন্য প্রবেশপথ না দিয়ে পরীক্ষা দিতে না দেওয়া একজন শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট করার সামিল। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমী পারভিন জানান, জরিপ আলী তার প্রবেশপত্র না পাওয়ার বিষয়টি আমাকে জানাননি। জেলা প্রশাসক কেন্দ্রে গেলেও তিনি কেন গেলেন না এমন প্রশ্নের জবাবে মোসুমী পারভীন বলেন পারিবারকি ব্যস্ততায় তিনি যেতে পারেননি।
/এএন