বরিশালে স্কুল বন্ধ থাকলেও চলছে কোচিং
করোনা মহামারির তৃতীয় ঢেউসহ অমিক্রন সংক্রমণ রোধে দেশের স্কুল-কলেজের পাশাপাশি সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বরিশাল নগরীর সব স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও অলিগলিতে অবৈধ ভাবে চালু রেখেছে কোচিং সেন্টার। কোনো কোনো কোচিং সেন্টার সাইনবোর্ড না লাগিয়ে কৌশলে চালাচ্ছে। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।
কোচিং ও স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাও এর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) বরিশাল নগরীর বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর বগুড়া রোড, অক্সফোর্ড মিশন, অপসোনিন মোড়, নতুন বাজার, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনেসহ অনান্য স্থানের কোচিংগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিধি-নিষেধ অমান্য করেই খোলা রেখেছে কোচিং সেন্টার। তবে কোচিং বন্ধ রাখার কোনো চিঠি পায়নি বলে দাবি করেছেন কোচিং পরিচালকরা। কোচিংগুলো খোলা থাকার পরেও প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই।
নগরীতে আগের মতোই কোচিং সেন্টারগুলোর সামনে ভিড় দেখা গেছে।
এ সময় অভিভাবকদের কাছে কোচিং চালু রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা এড়িয়ে যান। ব্রাইট অ্যাকাডেমি, রাইট, প্রাইমেট, সায়েন্স অ্যাকাডেমি, স্টুডেন্টসহ কোচিং সেন্টারগুলোতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে দেখা যায়।
সায়েন্স অ্যাকাডেমি কোচিং সেন্টারের পরিচালক তানজিল খান জানান, করোনাভাইরাস রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রেখেছি। তবে তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান চালু রাখা হয়েছে। বাকি ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অনলাইনে পাঠদান চলছে।
রাইট কোচিংয়ের দায়িত্বরত শিক্ষক লিংকন বলেন, ‘কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করতে আমাদের কোচিং সেন্টারগুলোতে একটি চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু এবার আামদের কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। তারপরও আমরা তিন থেকে চার দিন কোচিং বন্ধ রেখেছি। পরে গত সোমবার (২৪ জানুয়ারি) আমরা কোচিং চালু করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘যাতে করোনা সংক্রমণ না হয় সেজন্য আমরা শ্রেণিকক্ষের পাঠদান ভাগ করে নিয়েছি। অষ্টম শ্রেণি ও নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিকেলে এবং ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যার পর পাঠদান করা হয়। তবে আমরা করোনারোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে দিই।’
সচেতন নাগরিক কমিটি বরিশালের সভাপতি অধ্যাপক শাহ্ শাজেদা বলেন, ‘এ কোচিং সেন্টার চালু রাখার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ যে কোনো সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্যই দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রেখে যদি লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে দেশের অবস্থা খুবই খারাপ হবে। এর আগে করোনা ঢেউগুলো আমরা দেখেছি মানুষের মৃত্যুর মিছিল।’
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার সুন্দর একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যাতে সংক্রমণটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমাদের সরকার জনগণের জন্য ভালো চান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পরবর্তীকালে পরিস্থিতি বিবেচনা করে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেবে। আগে আমরা বাঁচি। তহলে আমরা অনেক শিক্ষা অর্জন করতে পারব।’
শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইন ভিত্তিক চালিয়ে নেওয়ার অহ্বান জানান এ শিক্ষাবিদ।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. সোহেল মারুফ জানান, কোচিং বন্ধ রাখার বিষয়ে তাদের কাছে অফিসিয়াল কোনো চিঠি আসেনি। চিঠি হাতে পেলে তাৎক্ষণিক কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সচেতন ও যার যার সন্তানের প্রতি আরো যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
গত শুক্রবার (২১ শে জানুয়ারি) শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি স্কুল কলেজের পাশাপাশি সব ধরনের কোচিং সেন্টার আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এর বৈঠকে।
এসএন