বাগেরহাটের ৪৪৬ আশ্রয় কেন্দ্রে থাকতে পারবে ২ লাখ ৩৫ হাজার
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূলের দিলে ধেয়ে আসছে। ঝড়টি মোংলা বন্দর থেকে ৯৬৫, চট্টগ্রাম থেকে ১০০৫, কক্সবাজার থেকে ৯৩৫ ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। এমতাবস্থায় মোখার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, কোস্টগার্ড , সুন্দরবন বিভাগ। নিরাপদ অবস্থানে আনা হচ্ছে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ডের যুদ্ধ জাহাজগুলো। এদিকে আবহাওয়া অফিস ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত জারির পর মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব অ্যালার্ট নম্বর-‘২’ জারি করেছে ।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আজিজুর রহমানের বলেন, ঘূর্নিঝড় মোখা মোকাবেলায় বাগেরহাটে ৮৪টি মেডিকেল টিম, ১হাজার ৯২০ জন সিপিপি'র সদস্য, ৫শ জন রেড ক্রিসেন্ট সদস্য, রোভার, বিএনসিসি, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, এনজিও, প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন ও প্রাথমিক চিকিৎসাসামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় ঔষধ এবং ৪৪৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যেখানে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৭৫ জন আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়াও ত্রাণ প্রদানের জন্য ৫২২ দশমিক ৮০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শাহিন মজিদ বলেন, মোংলা বন্দরের বাণিজ্যিক জাহাজে পণ্য উঠা-নামার কাজ স্বাভাবিক রয়েছে। বন্দরে ১০টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এর মধ্য ৩টি জাহাজ বন্দর ত্যাগ করার কথা রয়েছে। একই সাথে আরও ৪টি জাহাজ পণ্য খালাসের জন্য বন্দর চ্যানেলে প্রবেশ করার কথা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মোংলা উপকূলে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। তবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অ্যালার্ট নম্বর-‘২’ জারি করেছি এবং কন্টোল রুম খোলা হয়েছে । বন্দরে অবস্থানরত বাণিজ্যিক জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ এখনই বন্ধ হচ্ছে না।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন ( ডিএফও,বাগেরহাট ) জানান, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ২টি রেঞ্জ অফিসের আওতায় ১৬টি স্টেশন ও ৬৩টি টহল ফাঁড়ি রয়েছে। এসব স্টেশন ও ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষয়ক্ষতির কবল থেকে জানমাল রক্ষায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্টেশন ও ফাঁড়িতে দায়িত্বরতদের ঝড়ের অবস্থান বুঝে নিরাপদে আশ্রয় নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী ও প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানিয়েছেন, করমজলে বন্যপ্রাণীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।
এ ব্যাপারে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশ জানিয়েছেন, মোংলায় ১০৩টি সাইক্লোন সেল্টার ও উচ্চ স্কুল ভবনগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝড়ের আগে ও পরে স্থানীয়দের সহায়তা করার জন্য ১ হাজার ৪০০ সেচ্ছ্বাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। শুকনো খাবার মজুদ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কনট্রোল রুম খোলা হয়েছে। একটি কনট্রোল রুম খুলে এর মাধ্যমে ঝড়ের অবস্থা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কোস্টগার্ডের পশ্চিম জোনের সদর দপ্তরের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেনেন্ট কমান্ডার তারেক আহমেদ বলেন, উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সতর্ক বার্তা প্রচার চলছে। এ ছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে সাইক্লোন শেল্টারে নেওয়ার পাশাপাশি কোস্টগার্ড স্টেশনে আশ্রয় দেওয়া হবে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোস্টগার্ডের সব জাহাজ, বোট, স্টেশন, আউটপোস্ট এবং ডিজাস্টার রেসপন্স ও রেসকিউ টিম প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়াও কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের একটি জোনাল অফিস ও ১৪টি স্টেশনে কর্মরতদের এবং যুদ্ধ জাহাজগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।
মোংলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা হারুন আর রশিদ বলেন, ঝড়টি মোংলা বন্দর থেকে ঘূর্ণিঝড়টি ৯৬৫, চট্টগ্রাম থেকে ১০০৫, কক্সবাজার থেকে ৯৩৫ ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে।
এসআইএইচ