ফুলবাড়ীর ফুলকপি যাচ্ছে সারাদেশে
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় ফুলকপির বাম্পার ফলন হয়েছে। এ সব ফুলকপি এখন স্থানীয় বাজারে চাহিদা পূরণ করে চলে যাচ্ছে জেলার নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, উলিপুর, চিলমারীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। দূরদূরান্তের ব্যবসায়ীরা ফুলকপি কিনে ট্রাক ও ভ্যানযোগে নিয়ে যাচ্ছেন।
দাম ভালো থাকায় ফুলকপি বিক্রি করে বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্যের চাকা। প্রতি বছর প্রান্তিক চাষিরা ভাল দামের আশায় আগাম হাইব্রিড জাতের ফুলকপি চাষ করছেন। শীত মৌসুমে আগাম ফুলকপি চাষে নানামুখী ঝুঁকি থাকলেও উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে লাভবান হচ্ছেন উপজেলার শতশত চাষি। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এক দিকে ফুলকপির বাম্পার ফলন অন্য দিকে বাজারে চাহিদা ও ভালো দাম থাকায় চাষিদের মূখে ফুঠে ওঠেছে হাসি।
কৃষক আজগার আলী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বারোমাসিয়ার নদীর তীরে কুটিবাড়ী এলাকায় ৩ বিঘা জমিতে এ বছর ফুলকপির চাষাবাদ করেন। প্রতি বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষে খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘দাম ভালো থাকায় শুরুর দিকে ফুলকপির মন দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। এখন দাম কিছুটা কমেছে। শুক্রবার ৫ মন ফুলকপি ৮২০ টাকা দরে নাগেশ্বরীর পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছি। এখন পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার ফুলকপি ক্ষেতেই বিক্রি করেছি। এরকম দাম থাকলে আরও ১ লাখ টাকার ফুলকপি বিক্রি করতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস।’
একই এলাকার কৃষক মনিন্দ্রনাথ মন্ডল ও মনারুল ইসলাম বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফুলকপির ভালো ফলনও হয়েছে এবং দাম ভালো থাকায় আমরা প্রতি বিঘায় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা ফুলকপি বিক্রি করতে পাচ্ছি। গত বছর এমন দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দাম ছিল। কৃষি বিভাগের পরামর্শে সময়মতো পরিচর্যা, সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় ফলনও হয়েছে আশাতীত। এ বছর আমরা এখনও ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা দরে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকারদের কাছে বিক্রি করছি। এ বছর ফুলকপি চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।
ফুলকপি বহন করা ভ্যান চালক মিজানুর রহমান ও গোপাল চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা লালমনিরহাট জেলার দুরারকুটি হাট থেকে এসে ফুলবাড়ী এলাকা থেকে ফুলকপি নিয়ে যাচ্ছি। এগুলো দুরারকুটি বাজার থেকে ট্রাকযোগে ঢাকায় যাবে। প্রতি ভ্যানে ৫০০ থেকে ৬০০ ফুলকপি এখন থেকে নিয়ে ২৭ কিলোমিটার দুরে লালমনিরহাট জেলার দুরারকুটি বাজারে ট্রাকে তুলে দিতে পারলে পাইকাররা আমাদের ভ্যান প্রতি ৬০০ টাকা দিবেন।’
নাগেশ্বরী উপজেলার ফুলকটি ব্যবসায়ী (পাইকার) মিঠু চন্দ্র জানান, ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে ৭৫০ থেকে ৮২০ টাকা দরে ফুলকপি ক্রয় করেন। তিনি প্রতিদিন অটোরিকশাযোগে ৩৫ থেকে ৪০ মন ফুলকপি কিনে নাগেশ্বরী বাজারে গিয়ে ভুরুঙ্গামারী, রায়গঞ্জ, ভিতরবন, বেরুবাড়ী, কালিগঞ্জসহ ওই এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ৯৫০ থেকে ১০৫০ টাকা করে বিক্রি করেন। তাদের কাছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাজারে কেজি প্রতি ফুলকপি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে খুচরা বিক্রি করে থাকেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. নিলুফার ইয়াছমিন জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে চলতি মৌসুমে উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় এ বছর প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে চাষিরা ফুলকপির চাষবাদ করেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় গত বছরের চেয়ে এ বছর বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় এ অঞ্চলের প্রান্তিক চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। এ সব ফুলকপি এখন স্থানীয় বাজারে চাহিদা পূরণ করে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এখনও চাষিরা ক্ষেতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকারদের কাছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় ফুলকপি বিক্রি করছেন।
এসিআর/এএন