বরিশালে অবৈধ ২০০ ইটভাটা, হুমকির মুখে পরিবেশ
বরিশালে বেড়েছে অনুমোদনহীন ইটভাটা। প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া প্রতিদিন অন্যের জমি দখল করে নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে এসব ইটভাটা গড়ে তুলেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এসব অবৈধ ইটভাটায় উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে চিমনী ভেঙ্গে দেওয়াসহ ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দিলেও পরে আবার ওইসব ভাটা চালু করছে প্রভাবশালীরা। বন্ধ করে দেওয়া অবৈধ ইটভাটা ফের চালু করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারী দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বরিশাল জেলায় তিন শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ঝিকঝাক ভাটা রয়েছে ২০০টি, যার মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে ১০৩টির। আরো ২৫টি ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়ার আবেদন করেছে। সেই হিসেবে কোনো ধরনের ছাড়পত্র এবং আবেদন ছাড়াই চলছে প্রায় ১০০টি ইটভাটা। এ ছাড়া পুরাতন ফিক্সড পদ্ধতির ২৮টি এবং সনাতন পদ্ধতির নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি ইটভাটা রয়েছে আরো শতাধিক। এতে প্রকাশ্যে কাঠ দিয়ে ইট পুড়াচ্ছে ইটভাটা মালিকরা। অপরদিকে লোকবল কম থাকায় একই জায়গায় বারবার অভিযান চালানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক।
পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ইটভাটার অবৈধ ড্রাম চিমনী ভেঙ্গে ভাটা সিলগালা করে দিলেও সার্বিকভাবে তেমন কোনো প্রভাব পড়ছে না।
সবশেষ গত ১৫ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা কাজিরহাট থানার পশ্চিম ভঙ্গা গ্রামে অভিযান চালিয়ে আলম ব্রিকস্ সহ বেশ কয়েকটি অবৈধ্য ইটভাটা ভেঙ্গে সিলগালা করে দেয়। এ সময় ওইসব ইটভাটা থেকে বিপুল অংকের জরিমানা আদায় করে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু পরদিন ১৬ জানুয়ারী সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন ছাড়াই ভঙ্গা এলাকায় সিলগালা করা আলম ব্রিকস্ এর কার্যক্রম ফের চালু করার অভিযোগ ওঠে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম মাহফুজুল আলম লিটনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গত ২ বছর ধরে অন্যের জমি দখল করে ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক হোসেন, ভুলু হাওলাদার ও হানিফ হাওলাদার। তারা আরো জানান, তাদের সহ স্থানীয় অনেক মানুষের জমি দখল করে অবৈধ ইটভাটা করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এতে বাঁধা দেওয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে প্রতিবাদকারীদের উপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় কাজিরহাট থানায় একটি মামলা হলেও লিটন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
বন্ধ ইটভাটা ফের চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মাহফুজুল আলম লিটন বলেন, ‘ড্রাম চিমনি ব্যবহার করায় তার ভাটায় শুধুমাত্র জরিমানা করা হয়েছে। ইটভাটা সিলগালা করা হয়নি। এ কারণে তিনি তার ভাটার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।’
এ ব্যাপারে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুননবী জানান, কাজীরহাট এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের বন্ধ করে দেওয়া ইটভাটা ফের চালুর বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। বন্ধ করে দেওয়া অবৈধ কিংবা কাঠ পোড়ানো ড্রাম চিমনীযুক্ত অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে শিঘ্রই অভিযান চালাবে উপজেলা প্রশাসন।
বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক মো. আবদুল হালিম জানান, গত ১৫ জানুয়ারি মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাজিরহাট এলাকার আলম ব্রিকস্ সহ বেশ কয়েকটি অনুমোদনবিহীন ইটভাটা ভেঙ্গে এবং জরিমানা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি কেউ অবৈধভাবে ইটভাটার কার্যক্রম চালু করে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসঅ/এসআইএইচ