ভালুকায় ৮৯ করাত কলের মধ্যে ৭৭টি অবৈধ, হুমকির মুখে বন
ময়মনসিংহের ভালুকায় ৮৯টি করাত কলের মধ্যে ৭৭টি বৈধ কাগজপত্র ও অনুমোদন নেই। সেগুলো আবার অধিকাংশ স্থাপন করা হয়ে সংরক্ষিত বন এলাকার মধ্যেই। তবে পৌর এলাকায় ১২টি করাত কলের লাইসেন্স আছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাত কল বসানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও তা মানছে না কেউ। এসব করাত কলে অবৈধ কাঠ চেরাই হচ্ছে। আবার লাইসেন্স না থাকায় করাত কলগুলো থেকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
উপজেলার মেদুয়ারী ইউনিয়নের পানিভান্ডা গ্রামের আব্দুল্লাহ নিঝুরী বাজারের পাশে ৬ শতক জমি ২ হাজার ৫০০ টাকা মাসিক ভাড়া নিয়ে ১০ বছর ধরে কাঠ চেরাই করছেন। রাস্তার পাশে যত্রতত্র কাঠ ফেলে রেখেছে। এতে যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলার ৮৯টি করাত কল আছে। এর মধ্যে পৌর এলাকায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত করাত কল ১২টি, ৭৭টি লাইসেন্সবিহীন। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করছে ৪০টি আর ১৫টির মতো কলের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
বন বিভাগের আইন অনুযায়ী, বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে করাত কল স্থাপন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তারপরও অধিকাংশ করাত কলই সামাজিক বন বিভাগের কাছাকাছি। সংরক্ষিত বন থেকে চোরাই পথে আনা বিভিন্ন গাছ চেরাই করা হচ্ছে এসব কলে। বন উজারের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। এতে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক করাত কল মালিক জানান, শিল্প-কারখানার কাঠ কাটার সূত্র ধরেই তাদের করাত কলের ব্যবসা। কল চালাতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই তারা কলগুলো চালাচ্ছেন।
অনুমতিপ্রাপ্ত করাত কল মালিকদের অভিযোগ, অবৈধ করাতকলের কারণে তাদের কলগুলো চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বাপা’র ভালুকা আঞ্চলিক শাখার সদস্য সচিব কামরুল হাসান পাঠান কামাল জানান, পৌর এলাকা ব্যতিত উপজেলার গড়ে ওঠা কলগুলোর কোনো লাইসেন্স নেই। এসব কলে অবাধে বনের কাঠ চেরাই হচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যপ্রাণী আজ হুমকির সম্মুখীন।
ভালুকা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানান, অবৈধ করাত কলের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যারা অবৈধভাবে চালাচ্ছে তাদের নোটিশ দেয়া হয়েছে। আবার অনেকে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে রেখেছেন।
উথুরা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ খান জানান, উথুরা রেঞ্জে ৪১টি করাত কল রয়েছে। এসব অবৈধ করাত কলের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যারা অবৈধভাবে কল চালাচ্ছে তাদের নোটিশ দেয়া হয়েছে। অনেকে লাইসেন্স পেতে আবেদন করে রেখেছেন, যা আইন বহির্ভূত। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা একেএম রুহুল আমিন ঢাকাপ্রকাশকে জানান, অবৈধ ও অনুমোদনহীন করাত কলের তালিকা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। করাতকল মালিকদের বনবিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সর্তক করে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একে/এমএসপি