যেসব কারণে আইভীর বড় বিজয়
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। রোববার (১৬ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত ভোটে আইভী তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারকে ৬৬ হাজার ৯৩১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে আইভী নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে নিজের একচ্ছত্র জনপ্রিয়তা ধরে রাখলেন। আরও পাঁচ বছরের জন্য নগরবাসীর সেবা করার সুযোগ পেলেন। তার এই বিশাল জয়ের নেপথ্যে অনেকগুলো কারণ কাজ করেছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকার ও বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে আইবি নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে মানুষের কাছে একজন গ্রহণযোগ্য মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তার এই পরিচিতি, মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহারই এমন জনপ্রিয়তার পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
প্রথমে তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র। এখান থেকেই মূলত একজন সফল জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার উত্থান শুরু হয়। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি আইভীকে।
২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হলে প্রথম নির্বাচনে তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় দফায়ও আইভীকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত করেন নারায়ণগঞ্জবাসী।
মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর গত ১০ বছরে আইভী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছিলেন। পুরো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকাজুড়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানোর সঙ্গে সঙ্গে শীতলক্ষ্যার পাড়ে বন্দর এলাকায় দৃশ্যমান বেশকিছু উন্নয়ন করেন। এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়িয়ে দিয়েছে।
‘সন্ত্রাসের জনপদ’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠা নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আইভী ছিলেন সোচ্চার। অদম্য সাহস নিয়ে তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তার এই ভূমিকাকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছিল নারায়ণগঞ্জবাসী। এখানেও তিনি ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তার ব্যক্তিগত ইমেজ, তার পিতা আলী আহম্মদ চুনকার ইমেজ। সঙ্গে ছিল আওয়ামী লীগ এবং নৌকা প্রতীক। আইভী ছিলেন প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। একবারের জন্য মনে হয়নি তিনি হাল ছেড়ে দিয়েছেন।
এসব কারণে এবারের নির্বাচনের আগে থেকেই অনেকটা ধারণা করা হচ্ছিল, ফলাফল আইভী'র পক্ষে যাবে। সাধারণ মানুষের এই ধারণার প্রতিফলন ঘটেছে নির্বাচনী ফলাফলে।
যদিও নির্বাচনী মাঠে নানান হিসাব নিকাশ ছিল। আইভী বিরোধীদের একাট্টা হওয়া, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের একটি ক্ষুদ্র অংশ, বিশেষ করে ওসমান পরিবারের বিরোধিতা এবারের নির্বাচনী ফলাফলে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে আলোচনায় ছিল। আইভীকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল। যদি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাসিমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনের কয়েকদিন আগে থেকেই দিন-রাত নারায়ণগঞ্জে সক্রিয় ছিলেন আইভীর পক্ষে। যার ফলে শেষপর্যন্ত সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী তার বিজয় নিশ্চিত করেন। বড় ব্যবধানে জয়ের মধ্য দিয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী আবারও জানান দিলেন, তিনি এখনো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নাগরিকদের কাছে সমান জনপ্রিয় এবং তাদের আস্থার প্রতীক।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, রোববারের নির্বাচনে ভোট পড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে মেয়র পদে সেলিনা হায়াৎ আইভী পেয়েছেন এক লাখ ৬১ হাজার ২৭৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার হাতি প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৭১টি।
এনএইচবি/এসএ/