বাকৃবিতে রেল স্টেশন আছে, থামে না ট্রেন
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) রেল স্টেশন আছে। দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক ধরে এই স্টেশনে থামে না ট্রেন। রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় খচিত সেই নামফলকও।
জানা যায়, ১৯৮৭ সালে তোফাজ্জল হোসেন নামে একজন টিকিট টেকার (টিটি) উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ট্রেনের কেবিনের ভেতর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তিনি নিহত হন। এরপর সারাদেশে রেলস্টেশনগুলো ৩৬ ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকে। বন্ধ থাকে বাকৃবির রেলস্টেশনটিও। পরে বাকি সব রেলস্টেশন চালু হলেও আজ পর্যন্ত চালু হয়নি এই স্টেশন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশ থেকে আসা প্রায় সাত হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এখানে অধ্যায়ন করছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা তিন সহস্রাধিক। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের পাশে রয়েছে কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২০ হাজারের বেশি বাসিন্দা। রেলস্টেশনটি চালু করা গেলে তাদেরও ভোগান্তি অনেকটা কমে যেত। কারণ ময়মনসিংহ জেলার সঙ্গে আশপাশের জেলার সড়ক ব্যবস্থা বেহালের কারণে রেলপথই হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র নিরাপদ মাধ্যম। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মচারীসহ সবার পছন্দ রেলপথ।
সূত্র আরো জানায়, এই রেললাইন ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহগামী ১৫টির বেশি ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু থামে না একটিও। কয়েক দশকের পরিক্রমায় টিকিট কাউন্টার ও সিগন্যাল ইউনিটটিও জরাজীর্ণ অবস্থায় রূপ নিয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, ‘রেল স্টেশনটি চালু হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মচারীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকার মানুষের ভোগান্তি অনেকখানি কমে যেত। তাই রেল স্টেশনটি চালু করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই রেল স্টেশনটি চালু করার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেমু ট্রেন চালু করতে রেল মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু দীর্ঘ দিন পার হলেও বাকৃবিতে সেই ডেমু ট্রেনটিও চালু হয়নি। সেই সময় রেল স্টেশন চালু করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার পরিষদের সভাপতি মো. লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মাহবুবুর রশীদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি রেজিস্ট্রার বরাবর দেওয়া হয়েছিল। চিঠিতে সব ধরনের ট্রেনে বাকৃবি স্টেশনে যাত্রী ওঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করা হয়। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি।
আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল তাদের ইশতেহারে রেল স্টেশনটি চালু করার বিষয়টি উল্লেখ করে। কিন্তু যে দলই নির্বাচিত হোক না কেন, তাতে রেল স্টেশনটি আর সচল হয় না।
এমএকে/এসআইএইচ