নওগাঁয় স্কোয়াশ চাষে প্রান্তিক কৃষকের সাফল্য
নওগাঁয় মধ্যপ্রাচ্যের সবজি স্কোয়াশ চাষ হচ্ছে। অতি পুষ্টিকর শীতকালীন এই সবজি চাষ করে এলাকায় বেশ সুনাম অর্জন করেছেন সদর উপজেলার কৃষক আব্দুল লতিফ। তার এক বিঘা জমিতে বিষমুক্ত স্কোয়াশের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে স্কোয়াশের দাম ভালো থাকায় স্কোয়াশ বিক্রি করে ভালো লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।
কম খরচে, রোগবালাই মুক্ত লতিফের স্কোয়াশ চাষ দেখে আশ-পাশের গ্রামের অনেক কৃষক স্কোয়াশ চাষের আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, নওগাঁ সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের মঙ্গলপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুল লতিফ তার এক বিঘা জমিতে বিদেশি হাইব্রিড জাতের স্কোয়াশ চাষ করেছেন। জমিতে বীজ রোপনের ২ মাসের মধ্যে গাছগুলো বেড়ে উঠেছে। সেই স্কোয়াশের গাছে গাছে অসংখ্য হলুদ রঙের ফুল ফুটে আছে। গাছের গোড়ায় বোটায় বোটায় ধরে আছে ছোট বড় অনেক স্কোয়াশ। কোনটির ওজন দুই থেকে আড়াই কেজির মতো।
এই সবজিটি দেখতে অনেকটা শশার মতো। কিন্তু আকারে অনেক বড় এবং সবজিটির আকৃতি বড় সরু মিষ্টি কুমড়ার মতো। প্রতিদিন আব্দুল লতিফ এর স্কোয়াশ ক্ষেত দেখতে আসছেন আশে-পাশের গ্রামের অনেক কৃষক। ফলন ভালো হওয়ায় তারাই পরিকল্পনা করছেন আগামী দিনে স্কোয়াশ চাষ করার।
স্থানীয় ফতেপুর গ্রামের কৃষক ইউনুছ আলী বলেন, 'আমরা মূলত দেশীয় জাতের বিভিন্ন সবজির চাষ করে থাকি। এই প্রথম আমাদের এলাকায় মঙ্গলপুর গ্রামের কৃষক লতিফ বিদেশী জাতের স্কোয়াশ চাষ করেছে। এই সবজির নাম আমি ব্যক্তিগতভাবে আগে কখনও শুনিনি বা দেখিনি। গত বছরের নভেম্বর মাসে এ সবজির চাষ শুরু করে। বর্তমানে দুই থেকে আড়াই কেজি ওজন হয়েছে প্রতিটি স্কোয়াশের। যতদূর জানি এখন পর্যন্ত রোগবালাই হয়নি। মনে হচ্ছে এটি লাভবান একটি সবজি। আমিও পরিকল্পনা করছি স্কোয়াশ চাষ করার।'
নোমান হোসেন নামের স্থানীয় আরেক কৃষক বলেন, 'খুব অল্প সময়ে গাছে স্কোয়াশ সবজি ধরেছে। কোনো রোগবালাই নেই। বাজারে এই সবজির দামও নাকি ভালো। স্কোয়াশ চাষে খরচও তুলনামূলক কম। লতিফ ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি স্কোয়াশ চাষের বিষয়ে। যদি কৃষি অফিস থেকে সহায়তা ও পরামর্শ পাই তবে আমরাও স্কোয়াশ চাষ করবো।'
স্কোয়াশ চাষী আব্দুল লতিফ বলেন, 'শীতকালীন সময়ে আমি আলু, টমেটো, শিম, কপি এসব সবজির আবাদ করতাম। গত বছরের অক্টোবর মাসে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় স্কোয়াশ চাষ শুরু করি। নভেম্বর মাসের শুরুতে এক বিঘা জমিতে বীজ বপন করি। বর্তমানে ২ মাস ৯ দিনে প্রায় বিক্রির উপযুক্ত হয়ে গেছে। তবে চলতি মাসের শেষের দিকে ক্ষেত থেকে তুলে বিক্রি করা শুরু করবো। এখন প্রতিটি স্কোয়াশ দুই থেকে আড়াই কেজি ওজন হয়েছে।'
বীজ বপন ও পরিচর্যার বিষয়ে জানতে চাইলে লতিফ বলেন, 'এক বিঘা জমিতে ১৩টি সারি আছে। প্রতি সাড়িতে ৪২টি গাছ আছে। প্রতিটি গাছ থেকে মোট ১০টি করে স্কোয়াশ সবজি পাবো বলে আশা করছি। মোট ৫৫২ টির মত স্কোয়াশ গাছ আছে আমার ক্ষেতে। প্রতিদিন বিকেল বেলা করে গাছগুলোতে পানি দিতে হয় ‘
লতিফ জানান, বীজ, সার, সেচ ওষধু খরচ দিয়ে প্রতি বিঘায় ২০-২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। তবে আমাকে কৃষি অফিস থেকে কিছু সহায়তা করা হয়েছে। আর বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি স্কোয়াশ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে। শেষ পর্যন্ত ফলন ভালো হলে রোগবালাই না থাকলে ক্ষেত থেকে প্রায় ১০০ মন স্কোয়াশ পাওয়া যাবে। সব খরচ বাদ দিয়ে এক লাখ টাকার মতো লাভ হবে বলে আশা করছি।'
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি নওগাঁর উপপরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ জানান, 'স্কোয়াশ মূলত একটি শীতকালীন ও বিদেশি জাতের সবজি। এটি মিষ্টি কুমড়ার মতো সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। মধ্যপ্রাচ্যের এই স্কোয়াশ চাষ অল্প খরচের ফসল। দ্রুত বর্ধনশীল একটি সবজি ও অল্প পরিশ্রমেই অধিক আয় করা সম্ভব। এ ফসলে কোনো রোগের উপদ্রব তেমন নেই। দেশের প্রচলিত কোনো সবজির এমন ভালো উৎপাদন ক্ষমতা নেই। স্কোয়াশ চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে নওগাঁর কৃষি অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে। নওগাঁ সদরের কৃষক আব্দুল লতিফকে স্কোয়াশ চাষে কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহায়তা করা হয়েছে। বর্তমানে তার ক্ষেত্রের স্কোয়াশ বিক্রির উপযোগী হয়েছে। তবে ৩ মাস পর স্কোয়াশগুলো পুরোদমে পরিপক্ক হবে। স্কোয়াশ চাষে আমরা নানাভাবে জেলার কৃষক ভাইদের মাঝে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। কোনো কৃষক স্কোয়াশ চাষে আগ্রহী হলে কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ ও সহায়তা করা হবে।'
/এএন