বাগেরহাটে লোডশেডিংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খাত
বাগেরহাটের শহর ও উপজেলাগুলোতে অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়েছে লোডশেডিং। তার উপর লোডশেডিংয়ের যে শিডিউল দেওয়া হয়েছে তাও মানা হচ্ছে। এরফলে জনভোগান্তিসহ বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মৎস্য খাতে। বরফ কারখানাগুলো থেকে চাহিদা অনুযায়ী বরফ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ী ও জেলেরা। এদিকে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাটে গলদা ও বাগদা চিংড়ি থেকে শুরু করে, ইলিশ, ভেটকি, পারশে, টেংরা, রুই ও কার্প জাতীয় মাছ উৎপাদান হয়। এ জেলায় উৎপাদিত সাদা সোনাখ্যাত চিংড়িসহ সাদা মাছ প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। কিন্তু বাগেরহাটে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বরফ কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বরফ কারখানায় গিয়ে চাহিদা অনুযায়ী বরফ পাচ্ছে না, মৎস্য চাষি ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এতে তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।
বারাকপুর মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, বিদ্যুতের সমস্যার কারণে বরফ কম জমাট বাঁধায় আগের থেকে বেশি টাকার বরফ দিয়ে মাছ পাঠাতে হচ্ছে। আগে যেখানে দেড় হাজার টাকার বরফ দিয়ে এক পেটি মাছ ঢাকায় পাঠানো যেত এখন সেখানে প্রায় ২ হাজার ৪০০ টাকার বরফ প্রয়োজন হচ্ছে।
সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ফিসিং ট্রলারের চালক মিকাইল ইসলাম বলেন, ‘টানা ৬৫ দিন অবরোধ আমরা ঠিকমতো মেনেছি। এখন আমরা সাগরে মাছ ধরতে যাব। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী বরফ পাওয়া যাচ্ছে না।’
খুচরা বরফ ব্যবসায়ী ইসলাম জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের অজুহাতে ভেতরে ফাঁকা বরফ দেওয়া হচ্ছে, মাঝে মধ্যে কম জমাট বাঁধা বরফও দেওয়া হচ্ছে। এরফলে ব্যবসায়িক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
সুন্দরবন বরফ কলের ক্রেন অপারেটর মিঠুন মণ্ডল জানান, দিন রাতে অনেকবার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে। একবার বিদ্যুৎ গেলে অনেক সময় পরে আবার আসে। বিদ্যুতের লুকোচুরির ফলে বরফ ঠিকমতো জমাতে পারছেন না, একবার জমে আবার বিদ্যুৎ চলে গেলে গলে যায়।
নাগেরবাজারের বরফকল মালিক তারাপদ দাম বলেন, যেভাবে বিদ্যুৎ যাচ্ছে তাতে এখনই ক্রেতাদের ঠিকমতো বরফ দিতে পারছেন না। আগামী দিনে বরফের চাহিদা পূরণ করা তাদের পক্ষে মোটেও সম্ভব হবে না। তা ছাড়া বিদ্যুৎ যাওয়া আসার কারণে বৈদ্যুতিক মোটরসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের ক্ষতি হচ্ছে।
বাগেরহাট চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মোহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে বাগেরহাটে বরফের সংকট দেখা দিয়েছে। এরফলে ঠিকমতো মাছ সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া রপ্তানির জন্য চিংড়ি হিমায়িত করতেও সমস্যা হচ্ছে। এরফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মাছ চাষিরা।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ.এস.এম রাসেল বলেন, বাগেরহাট একটি মৎস্য প্রধান এলাকা। মাছ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করণে বিদ্যুতের প্রয়োজন। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে বরফ জমাতে পারছে না মিল মালিকরা। এতে সাগরে যাওয়ার জন্য জেলেরা ও ব্যবসায়ীরা বরফ পাচ্ছে না। আর হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজও করতে পারছে না।
বাগেরহাট ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ নির্বহিী প্রকৌশলী জিয়াউল হক বলেন, সারাদেশে জ্বালানি সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে সরকারের নেওয়া লোডশেডিং কার্যক্রম চলছে। বাগেরহাটেও বরাদ্দ অনুযায়ী লোডশেডিং করতে হচ্ছে, শিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না।
এসএন