কেজিডিসিএল কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাবে অবৈধ কোটি টাকা
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) লুৎফুল করিম চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবে এক কোটিরও বেশি অবৈধ টাকার হদিস পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে এসব টাকা অবৈধ নয়, বৈধ উপায়ে উপার্জিত বলে দাবি করেছেন লুৎফুল করিম চৌধুরী।
দুদক বলছে, গত বছর তিনি আয়কর রিটার্নে নগদ টাকার পরিমাণ দেখিয়েছেন প্রায় ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু নগরীর তিন ব্যাংকে স্ত্রী ও তার অ্যাকাউন্টে এক কোটি তিন লাখ ২৭ হাজার টাকার সন্ধান পায় দুদকের তদন্তকারী দল। এছাড়া স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে রয়েছে ৪০ লাখ টাকা। যা নো ডেবিট করতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে কৃষি ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক ও এবি ব্যাংকের ষোলশহর ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে চিঠি আকারে আবেদন করে দুদক। চিঠির প্রেক্ষিতে এই তিন শাখার লেনদেন সাময়িক ব্লক রয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, ২০১৮ সাল থেকে লুৎফুল করিম চৌধুরীর দূর্নীতির তথ্য তদন্ত করছে দুদক। তদন্তে কৃষি ব্যাংকের ষোলশহর শাখায় ৫ বছর মেয়াদি ২৭ লাখ টাকার এফডিআরের (নম্বর ৬১৪) সন্ধান পায়। এটি ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর খোলা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তার হিসাব নম্বরে (২৯৩১০৩১০০৬০৫০১) ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৩৬৪ টাকা রয়েছে। সব মিলিয়ে কৃষি ব্যাংকে তার ৪০ লাখ ২৪ হাজার ৩৬৪ টাকা খোঁজ পায় দুদক।
এ ছাড়া বেসিক ব্যাংকের ষোলশহর শাখায় তিন বছর মেয়াদি ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আছে তার নামে। এছাড়া হিসাব নম্বরে (২৪১৪০১০০১২৩৯৯) ৩ লাখ ৩ হাজার ৩৯৪ টাকাসহ মোট ২৩ লাখ ৩ হাজার ৩৯৪ টাকা রয়েছে লুৎফুল করিম চৌধুরীর।
নগরীর ও আর নিজাম রোড শাখায় স্ত্রী ফারহানা রশিদের নামে পারিবারিক সঞ্চয়পত্র আছে ৪০ লাখ টাকার। এফএসপি রেজি. ১২১/৮ নম্বরের হিসাবটি খোলা হয় ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট। তার বৈধ কোনো আয়ের উৎস নেই।
সব মিলিয়ে তিন ব্যাংকে এক কোটি ৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৫৯ টাকার সন্ধান পান দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা। কেজিডিসিএলের জমি কেনা ও টাকার বিনিময়ে পদোন্নতির মাধ্যমে থেকে লুৎফুল করিম চৌধুরী এসব টাকা আয় করেন। পরে নিজের ও স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে রেখেছেন।
তদন্তে আরও দেখা যায়, তার নামে নগরীর বাকলিয়ায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কল্পলোক আবাসিক এলাকায় অকৃষি ৪ কাঠার একটি প্লট (নম্বর-এ/৭৫) রয়েছে। ২০০৬ সালে চার কাঠার প্লটটি সিডিএ থেকে বরাদ্দ পান তিনি। তখন কাঠাপ্রতি এর মূল্য ছিল ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সে হিসেবে চার কাঠার দাম ১৫ লাখ টাকা।
দুদক তদন্তে দেখা গিয়েছে, ২০১৭ সালে জিইসি এলাকার ইউনেস্কো সেন্টারের পাশে ২৭ কাঠা জমি কেনে কেজিডিসিএল। এতে খরচ হয় প্রায় ১০৪ কোটি টাকা। ওই সময়ে জমিটির মৌজা দর ছিল কাঠাপ্রতি ৪০ লাখ টাকা। সে হিসেবে ২৭ কাঠা জমির দাম পড়ে ১১ কোটি টাকা। কেজিডিসিএলের জমি কেনার দুর্নীতি ও মধ্যরাতে ৫৭ জনকে পদোন্নতির ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন লুৎফুল করিম চৌধুরী।
কেজিডিসিএলের তথ্যমতে, ১৯৮৫ সালে লুৎফুল করিম চৌধুরী সংস্থাটির বিক্রয় সহকারী পদে যোগ দেন। এই পদের বেতন গ্রেড ১২তম। বেতন স্কেল-৯ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা। উপমহাব্যবস্থাপক হিসেবে পদোন্নতি পান ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্বে আছেন ২০১৮ সালের ১০ জুন থেকে। এ পদের বেতন স্কেল ৫০ হাজার ৭১ হাজার ২০০ টাকা। ২০২০ সালের ৩০ জুনে তার আয়কর নথিতে নগদ ৪৯ লাখ ৯৪ হাজার ৫৮৮ টাকা দেখানো হয়েছে।
আইকে/এএন