বাহার ম্যাজিকে নৌকার জয়, সাক্কুর কাঁটা ছিলেন কায়সার
বাহার ম্যাজিক আর কুমিল্লা আওয়ামী লীগের একতা রিফাতকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছে। অন্যদিকে মনিরুল হক সাক্কুর পরাজয়ের প্রধান কারণ হচ্ছেন আরেক মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। দুই জনই ছিলেন বিএনপির। যদিও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় দুই জনকেই বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করলেও পরোক্ষাভাবে আওয়ামী লীগ-বিএনপির লড়াই হয়েছে কুসিক নির্বাচনে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম দু’টি নির্বাচনে মেয়র পদে ভরাডুবির ঘটেছিল আওয়ামী লীগের। তবে তৃতীয়বারের লড়াইয়ে এবার সফল হয়েছে দলটি। বিলুপ্ত কুমিল্লা পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে টানা ১৬ বছর মেয়রের দায়িত্বে থাকা মনিরুল হক সাক্কুকে ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো মেয়র হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত।
দলীয় নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে কুমিল্লা নগর আওয়ামী লীগে দৃঢ় ঐক্য এবং সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের ‘ম্যাজিক লিডারশিপের’ কারণে জয়ের বন্দরে পৌঁছেছে আওয়ামী লীগ।
পক্ষান্তরে টানা ১৬ বছর দায়িত্বে থাকার পরও হ্যাট্টিক জয়ের মুখ দেখতে পারেনি সাক্কু। এর প্রধান কারণ তার ভোট দুই ভাগে বিভক্ত হওয়া। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘কাঙ্খিত উন্নয়ন’ করতে না পারা।
বুধবার (১৫ জুন) অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫০ হাজার ৩১০ ভোট পেয়ে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক মেয়র মনিরুল সাক্কু পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। আরেক মেয়র প্রার্থী বিএনপির অপর নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।
সাক্কুর পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কুমিল্লার রাজনীতি সচেতনরা বলছেন, বিএনপির একটি অংশ ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পাশে। আরেক অংশ ছিল নিজামউদ্দিন কায়সারের সঙ্গে। যার ফলে বিএনপি’র ভোট দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। বলা যায়, সাক্কুর পরাজয়ে বড় নিয়ামক ছিলেন কায়সার। তার ঘোড়া দৌড়ের কারণেই ২৯ হাজার ৯৯ ভোট বের হয়ে যায় সাক্কুর পকেট থেকে। তাই নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই নগরীতে সাক্কুর পরাজয় নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নৌকা প্রতীকের আরফানুল হক রিফাত জয় পেয়েছেন মূলত ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ, ভোটের রাজনীতিতে কুমিল্লা সদের আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের জাদুকরি নেতৃত্ব আর সাক্কু-কায়সারের ভোট ভাগাভাগির কারণে।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাই বাবলু মনে করেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপির নেতৃত্বে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার আওয়ামী লীগ বেশি ঐক্যবদ্ধ ছিল। এ ছাড়া নগরীর ভোটাররাও পরিবর্তন চেয়েছে। সেক্ষেত্রে আরফানুল হক রিফাতই ছিল তাদের প্রথম পছন্দ। এ কারণেই আমরা এবার জয়লাভ করতে পেরেছি।’
একই কথা বলেছেন কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান পিয়াস। তিনি বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপির নেতৃত্বে মহানগর আওয়ামী লীগের ছিল অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ, অনেক বেশি শক্তিশালী। এ ছাড়া আমাদের সকল সহযোগী সংগঠন তার নেতৃত্বে একসঙ্গে কাজ করেছে। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কারণে, তাদের মনোবল শক্তির কারণে আমাদের সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের বিজয় হয়েছে, নৌকার বিজয় হয়েছে, জননেত্রী শেখ হাসিনার বিজয় হয়েছে। আর এই বিজয়ের পেছনে পুরো কৃতিত্ব বাহারের ‘ম্যাজিক লিডারশিপ’।
কুমিল্লার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, প্রচার-প্রচারণা এবং সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগ এবার জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিল। সাংগঠনিকভাবে তারা অনেক সুশৃঙ্খল ছিল। সবচেয়ে বড় কথা তারা ভোটারদের মন জয় করতে পেরেছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ভোটারদের আশ্বস্ত করতে পেরেছে- তাদের দ্বারা কুমিল্লার উন্নয়ন সম্ভব।
মেয়র পদে রিফাতের জয়ে এমপি বাহারের নেতৃত্বের প্রভাব ছিল কি না- এমন প্রশ্নে আহসানুল কবীর বলেন, অবশ্যই। তিনি সংগঠক হিসেবে অত্যন্ত দক্ষ এবং বিচক্ষণ। কুমিল্লা সিটিতে নৌকার জয়, এমপি বাহারের সাংগঠনিক দক্ষতা ও প্রজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ।
এনএইচবি/এসজি/