নানা রোগে আক্রান্ত হবার শঙ্কায় নগরবাসী
ধুলায় ধূসর সবুজ সিলেট
পর্যটন নগরী সিলেটের রাস্তাঘাট থেকে অলিগলি সবখানে ধুলার রাজত্ব। ধুলার আস্তরণ পড়েছে আশপাশের বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও। গাছগাছালির রঙও মরে গেছে অনেক জায়গায়। এ যেন ধুলায় ধুসর এক শহর।
সরেজমিনে আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ, বালুচর, পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট, লামাবাজার, নাইওরপুল, টিলাগড়, সোবহানীঘাট, শাহজালাল উপশহর, কদমতলী এলাকায় সড়কে সমানে উড়ছে ধুলাবালু।
নগরের অভ্যন্তরে নালা, সড়ক সংস্কার, বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ ও বিদ্যুতের ঝুলন্ত তার মাটির নিচে স্থানান্তরের কাজ চলমান। ফলে ধুলাবালুতে ধূসর হয়ে পড়েছে সবুজ প্রকৃতির সিলেট নগর। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শহুরে মানুষ এবং সিলেটে ঘুরতে আসা পর্যটকরা।
এক সময় পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব নগর হিসেবে খ্যাত ছিল পূণ্যভূমি সিলেট। নগরীর শীতল বাতাস মন জুড়াতো। সবুজ প্রকৃতির প্রেমে পড়তো সবাই। কিন্তু সিলেটের সে সবুজ প্রকৃতি এখন ধূসর হয়ে উঠছে।
সামি চৌধুরী নামে নগরের সুবিদবাজার এলাকার এক বাসিন্দা জানান, ‘বর্ষা মৌসুমে বড় বড় গর্ত থেকে গাড়ির চাকার চাপে পানি ছিটকে এসে পড়ে শরীরে। এখন পানি নেই তবে ধুলার কারণে রাস্তায় চলাচল মুশকিল হয়ে পড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে যে, যখন বাসা থেকে বের হই, তখনই মাথায় আসে কোন পথে গন্তব্যে গেলে অন্তত ধুলাবালি থেকে মুক্তি মিলবে।’
নগরের আম্বরখানা এলাকায় মোটরসাইকেল আহোরী আনিসুল হক চৌধুরী মুন বলেন, ‘সিলেট শহরের সবখানে এখন এক অবস্থা। হেলমেট ব্যবহার করেও রেহাই পাওয়া যায় না। শরীরে ও কাপড়ে সড়কের ধুলায় কাহিল হতে হয়।’
নগরের জিন্দাবাজার এলাকার মা ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম বলেন, ‘গেল প্রায় দুই বছর ধরে সড়ক ভাঙাচোরার কারণে ধুলাবালুর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ধুলার কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে। ধুলাবালু কমাতে সড়কে নিজ উদ্যোগে প্রায় সময় পানি ছিটিয়ে দিই। তাতেও তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না।’
ধুলাবালু স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এতে ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগ-বালাই হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানান সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত। তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘ধুলা শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে। ফলে ফুসফুসের ও শ্বাসতন্ত্রের অনেক রোগে আক্রান্ত হবার শঙ্কা তৈরি হয়। যাদের অ্যালার্জি ও অ্যাজমা আছে, তাদেরও সমস্যা হবে ধুলায়। ধুলাবালু থেকে রক্ষার জন্য ঘর থেকে বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যাবে।’
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আলম বলেন, ‘সিলেট শহরের প্রায় সাড়ে ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে দুইটি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। নতুন বছরের শুরুতে এ কাজ সম্পন্ন হবে। এতে নগরের মানুষরা যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সেটি কমবে। রাস্তায় ধুলাবালু যেন না উড়ে সেজন্য প্রতিদিন পানি ছিটানো হয়। বিভিন্ন জায়গায় এক সঙ্গে কাজ হওয়াতে একদিনে হয়তো সব জায়গায় পানি ছিটানো সম্ভব হয় না।’
একে/এএন