রাজশাহী থেকে ৪০০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানির টার্গেট
রাজশাহী অঞ্চল (রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ) থেকে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন আম রপ্তানির টার্গেট রয়েছে। এই র্টাগেট নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন। মঙ্গলবার (৭ জুন) পর্যন্ত অনুমানিক ৯০ টন আম রপ্তানি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এই অঞ্চলের উৎপাদিত আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ১২টি দেশে। এই সকল দেশে রাজশাহীর আম পৌঁছে দিচ্ছে রপ্তানিকারকরা। এরই মধ্যে লক্ষণভোগ, খিরসাপাত, গোপালভোগ, ল্যাংড়া আমের বেশকিছু চালান ঢাকায় প্রক্রিয়াকরণ শেষে রপ্তানি সম্পন্ন হয়েছে।
চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলা থেকে ৩০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানির প্রত্যাশার কথা বলছে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস। এই আম রপ্তানি হলে প্রায় তিন কোটি টাকার বৈদেশিক আয় যুক্ত হবে রাজশাহীর অর্থনীতিতে। রাজশাহী জেলা থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৫ মেট্রিক টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৭ মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৪ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০ দশমিক ১২৮ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৫ দশমিক ২৩০ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৬ দশমিক ৪৪৭ মেট্রিক টন ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়েছে। বিগত বছরগুলোর চেয়ে চলতি মৌসুমে জেলায় সর্বোচ্চ আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত কয়েক বছর থেকে আম রপ্তানির জন্য বিদেশের আমদানিকারকদের চাহিদা মতো উৎপাদনকার্য চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান রাজশাহীর বাঘার কলিগ্রামের চাষী শফিকুল ইসলাম। তিনি আরও জানান, স্থানীয় বাজারে আম বিক্রি করলে চাষবাদ পদ্ধতিতে এত নিয়ম মানতে হয় না। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে তাদের অনেক বিষয়ে নজরদারি রাখতে হয়। পরিমিত মাত্রায় গাছে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। মাত্রার বেশি কীটনাশক প্রয়োগ করলে সেই আম আর রপ্তানি হয় না। আবার মাছি পোকার আক্রমণ থাকলে সেই আম রপ্তানি হয় না। আকারে ছোট হলেও সমস্যা। এক কথায় আমের গুনগতমান ও আকার কোনও বিষয়ে কমতি মনে হলেই সেটা আর রপ্তানি করা যায় না। তাই তাদের সেভাবে পরিচর্যা করতে হয়।
আরেক চাষী ডা. শামসুল আলম জানান, আম রপ্তানিতে তাদের প্রত্যাশা সবসময় বেশি থাকে। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী আম উৎপাদন করেও রপ্তানি করা যায় না।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় এই বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। আর এই আম নিয়ে রাজশাহীর অর্থনীতিতে যোগ হতে পারে ৯০০ কোটি টাকা। রাজশাহীতে আম রপ্তানির ক্ষেত্রে পূর্বেই চুক্তিবন্ধ হয়েছে প্রায় ২০০ চাষি।
তারা আরও জানায়, চুক্তিবদ্ধ চাষীরা লক্ষণভোগ বা লখনা, হিমসাগর বা ক্ষিরসাপাত, ফজলি এবং ল্যাংড়া আম বিদেশে রপ্তানির উপযোগী করে উৎপাদন করেন। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ বা লখনা, ২৮ মে থেকে হিমসাগর ও ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া আম নামানো শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) উত্তম কুমার কবিরাজ জানান, রাজশাহীর আমের স্বাদ, গুনগত মান, কালার, ঘ্রাণ সবকিছু বিবেচনায় সেরা। এ কারণে আম রপ্তানিতে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আম রপ্তানির ক্ষেত্রে চাষীদের বাড়তি কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। তবে উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা কৃষিবিদ মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী থেকে আম রপ্তানিতে ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। রপ্তানিও হচ্ছে। তবে পরিবহন খরচটা খুবই বেশি। এ কারণে বিশ্ববাজারে অসম প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে ভারত, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে। রপ্তানিযোগ্য আম প্রক্রিয়াকরণ করে ইউরোপের বাজারে নিতে শুধু বিমান খরচই পড়ছে প্রতি কেজিতে প্রায় ১৮০ টাকা। একই পণ্য একই বিমান কোম্পানি প্রতিযোগী দেশগুলোর থেকে নিচ্ছে প্রায় ১০০ টাকা। এতে বিশ্ববাজারে রাজশাহীর আম বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এসআইএইচ