সিলেটে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান
সাজানো ও পরিপাটি সারি সারি রাজকীয় চেয়ার। আসনের সামনে সাদা কাগজে লেখা রয়েছে ‘রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ’। একইভাবে পাশের সাজানো চেয়ারগুলোর সামনেও কাগজ দিয়ে সাটানো হয়েছে ‘সাংবাদিক’ ও সংরক্ষিত'। অপর পাশে সাধারণ মানের চেয়ারগুলোতে বসেছেন রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
জেলা স্টেডিয়ামে সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সিলেটের জেলা প্রশাসন আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আঞ্চলিক মহাসমাবেশের দৃশ্য এটি। যা এখন আর সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে আটকে থাকেনি। দৃশ্যটি সিলেট থেকে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র।
মহান স্বাধীনতা, বিজয়ের সূবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষে চেয়ার বিন্যাসের মাধ্যমে রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হয়েছে-এমন প্রতিক্রিয়া সচেতন মানুষদের। এই ঘটনায় ঘৃণা, নিন্দা এবং ক্ষোভের ঝড় বইছে সর্বত্র।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সিলেট জেলা আহবায়ক মুকির হোসেন চৌধুরী এ ঘটনায় বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা একমাত্র জাতীয় দিবসগুলোতে সম্মানীত হন। বাকি সময় তাদের খোঁজ নেওয়া হয় না। বিজয়ের সূবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সিলেটে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আঞ্চলিক মহাসমাবেশ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। যাদের জন্য এই আয়োজন-তাদেরকে সাধারণ চেয়ারে রেখে মূলত কাদের বন্দনা করার জন্য এমন লোক দেখানো আয়োজন?’
সামনে কয়েক সারি পরিপাটি চেয়ার, পেছনে সাধারণ চেয়ারে বসে আছেন মুক্তিযোদ্ধারা
এ নিয়ে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। তাৎক্ষণিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেন অনেকে। বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমান বা অসম্মানজনক বলে মন্তব্য তাদের।
আব্দুর রহমান লিমন নামে একজন নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে একটি লেখায় শিরোনাম দিয়েছেন ‘এটা কি বীর সন্তানদের সম্মান..!’ তারপর তিনি লিখেছেন ‘সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে আঞ্চলিক বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নরমাল প্লাস্টিকের চেয়ার আর রাজনীতিবিদদের জন্য রাজকীয় সফেদ চেয়ার। লজ্জা লাগে!’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে প্রথমে আমি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি। কিন্তু আমার সঙ্গে থাকা বাকি মুক্তিযোদ্ধারা নীরব থাকায় এ বিষয়ে আর কথা বলিনি।’
তিনি বলেন, ‘চেয়ার দখলের জন্য যুদ্ধ করিনি। জীবনপণ যুদ্ধ করেছি দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ভালোবেসে। কিন্তু বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে এসে আমাদের প্রতি আয়োজকদের এমন দৃষ্টিভঙ্গি খুব লজ্জাজনক।’
এ বিষয়ে সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তীর ব্যক্তিগত সেলফোনে কয়েকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
ডিডি/এএন